গাজীপুরে সাপের কামড়ে মৃত ব্যক্তিকে সুস্থ করার চেষ্টা ওঝার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ১২:০০ এএম, ৩০ জুন ২০২৪
গাজীপুরে সাপের কামড়ে মৃতকে জীবিত করতে ওঝার ব্যাপক আয়োজন

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা গ্রামের মাঠে সাপের কামড়ে শনিবার সকালে এক টাইলস মিস্ত্রির মৃত্যুর পর তাকে সুস্থ করে তুলতে সন্ধ্যায় ওঝা দিয়ে চিকিৎসা করার প্রস্তুতি শুরু হয়। এ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

বিজ্ঞানের এমন উৎকর্ষের মধ্যে বাংলার সিনেমার মতো চলছে আয়োজন। সাপে কাটা রোগীকে বাংলা সিনেমায় যেমন ওঝা দিয়ে কড়ি চালান দিয়ে ঝাড়-ফুঁক দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়, ঠিক তেমনি আয়োজন চলছে।

সাপের কামড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম সাইফুল ইসলাম (৪০)। তিনি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বাসুরা গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে। তিনি পেশায় টাইলস মিস্ত্রি ছিলেন।

গত শুক্রবার রাতে বিলে মাছ ধরতে গেলে তাকে সাপে কামড় দেয়। প্রথমে তাকে স্থানীয় ওঝা দিয়ে ঝাড়-ফুঁক দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

jagonews24

বিকেলে তার জানাজার নামাজের আগে ঢাকার সাভার থেকে দুই ওঝা এসে চিকিৎসা করে মৃত সাইফুলকে সুস্থ করে তোলার দাবি করে জানাজা না পড়াতে অনুরোধ করেন। তাদের অনুরোধে জানাজা না পড়ে ওঝার চিকিৎসা (ঝাড়ফুঁক) করার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে স্বজনেরা।

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম নাসিম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্র ও মৃত সাইফুল ইসলামের স্বজনেরা জানান, সাইফুল ইসলাম গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রতিবেশীদের সঙ্গে টর্চলাইট দিয়ে আলো জ্বালিয়ে টেঁটা দিয়ে বাড়ির পাশের বিলে মাছ ধরতে যান। পথে হঠাৎ একটি বিষধর সাপ সাইফুলের বাঁ পায়ে কামড় দেয়। পরে তার সঙ্গে থাকা অন্যরা টেঁটা দিয়ে আঘাত করে ওই বিষধর সাপটি মেরে ফেলেন। তারপর মৃত সাপটি নিয়ে সাইফুল ও সাথের লোকজন বাড়িতে ফিরে ঘটনাটি পরিবারের লোকজন ও এলাকাবাসীকে জানান। ঘটনা জেনে সাইফুলের স্বজনেরা প্রথমে তাকে ওঝার কাছে নিয়ে যান। ওঝা ঝাড়-ফুঁক দিয়ে সুস্থ করতে না পারলে পরিবারের লোকজন রাতেই তাকে টাঙ্গাইল জেলা মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সকালে তার মৃত্যু হয়।

jagonews24

এদিকে, শনিবার বিকেলে মৃত সাইফুলকে গোসল শেষে কাফনের কাপড় পরিয়ে জানাজার নামাজ পড়ার আয়োজন করা হয়। বাড়ির পাশে একটি জানাজা নামাজের আয়োজন করার সময় কয়েকজন ওঝা এসে তাকে চিকিৎসা করে ভালো করা সম্ভব বলে দাবি করেন। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জানাজার নামাজ পড়া বন্ধ রেখে ওঝা দিয়ে পুনরায় চিকিৎসা করানোর আয়োজন শুরু হয়। এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করে। ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে আশপাশের লোকজন মাঠে জড়ো হয়েছে। অনেকে ঘটনাটি সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করছেন।

সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ করা লাইভে দেখা যায়, মাঠের মাঝখানে কয়েকটি কলাগাছ কেটে এনে মাটিতে পুঁতে রাখা হয়েছে। পাশে কয়েকটি দুধভর্তি পিতলের কলসি ও চেয়ার রাখা হয়েছে। চারপাশে উৎসক জনতার ভিড়।

রাত সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেন লেখার সময় ওঝা ও মৃত সাইফুলের মরদেহ সেখানে আনার প্রস্তুতি চলছিল। দুই ওঝা মৃত সাইফুলকে পরীক্ষা করে কী কী করতে হবে এসব বিষয় জানিয়ে মানিকগঞ্জ গিয়েছে কড়ি আনতে। কড়ি নিয়ে ফিরে এলে ঝাড়-ফুঁক শুরু হবে। এসব দেখতে সেখানে অপেক্ষা করছেন উৎসুক জনতা।

এ ব্যপারে কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম নাসিম বলেন, সাপের কামড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক ব্যক্তির হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে। পরে দাফনের আগে কয়েকজন ওঝা মৃত্য ব্যক্তির স্বজনরা কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাসের কারণে মৃত ব্যক্তির চিকিৎসা করানোর খবর আমরা পেয়েছি। বিষয়টি আমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

মো. আমিনুল ইসলাম/এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।