জাফলং

পর্যটকদের ভিড়ে চোরাই চিনি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ, বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সিলেট
প্রকাশিত: ০৮:১২ পিএম, ২৯ জুন ২০২৪
এভাবেই চোরাই চিনির বস্তা নিয়ে আসে নারী-শিশুরা

সিলেটের জাফলংয়ে পর্যটকদের ভিড় কাজে লাগিয়ে কৌশলে নারী-শিশুদের দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় চিনি নিয়ে আসছে একটি চক্র। ক্যাম্পের পাশ দিয়ে প্রকাশ্যে এসব চললেও নির্বিকার বিজিবি।

শুধু তাই নয়। দিনদুপুরে সীমান্ত পার করে নিয়ে আসা এসব চোরাই চিনি প্রকাশ্যে কিনছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এরপর সেগুলো পর্যটকদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি অনেক দোকানি প্রকাশ্যে ‘ইন্ডিয়ান চিনি’ বলে পর্যটকদের কাছে কম দামে বিক্রির চেষ্টা করতে দেখা যায়।

ভারতীয় চোরাই চিনি নিয়ে সিলেটজুড়ে হুলস্থূল কাণ্ড ঘটলেও দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র জাফলংয়ে এভাবে পর্যটকদের সামনে চোরাই চিনি প্রকাশ্যে বেচাকেনার খবর শুনে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।

সরজমিনে দেখা গেছে, জাফলংয়ের গুচ্ছগ্রাম ও বিজিবি ক্যাম্প টিলার অদূরে ভারত সীমান্ত দিয়ে একদল শিশু-কিশোর কাঁধে করে ছোট ছোট বস্তায় করে অবৈধভাবে ভারতীয় চিনি নিয়ে আসছে। টিলার ওপর ওঠার পর পর্যটকদের ভিড়ে মিশে যায় তারা। এরপর শুরু হয় দৌড়। একসঙ্গে দৌড়ে চিনির বস্তা নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। পরে ওজন করে ব্যবসায়ীরা তাদের কাছ থেকে কিনে নিচ্ছেন এসব চিনি। এরপর বস্তার সেই চিনি প্যাকেটজাত করে সাজিয়ে রাখা হচ্ছে দোকানে।

জাফলংপর্যটকদের ভিড়ে চোরাই চিনি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ, বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে

সকাল ১০টা থেকে এভাবেই শিশু-কিশোরদের চোরাই চিনি পরিবহনের খবর সংগ্রহ করার বিষয়টি বিজিবির কানে পৌঁছালে এ প্রতিবেদকের কাছে ছুটে আসেন দুজন বিজিবি সদস্য। এসময় তাদের চাকরি বাঁচাতে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন। পরে বিজিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসেও একই অনুরোধ করেন।

অবাক হওয়ার মতো তথ্য, এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে আসা তিনজন বিজিবি সদস্যের মধ্যে কারও ইউনিফর্মে নামফলক নেই। পরে অনেক চেষ্টার পর একজনের নাম পাওয়া গেছে। সোহেল রানা নামের ওই বিজিবি সদস্য সংগ্রাম পুঞ্জি বিওপির হাবিলদার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

সাংবাদিকদের খবর পেয়ে চোরাই চিনি পরিবহনকারী শিশু-কিশোরদের ধরপাকড় শুরু করেন বিজিবি সদস্যরা। এসময় চোরাই চিনির বেশ কয়েকটি বস্তাসহ শিশুদের ক্যাম্পের ভেতরে নিয়ে যান বিজিবি সদস্যরা। পরে চিনি রেখে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীমান্ত দিয়ে প্রকাশ্যে শিশু-কিশোররা ও নারীরা চিনি নিয়ে আসার বিষয়টি বিজিবি ও পুলিশের জানা রয়েছে। তাদের ‘লাইনম্যান’ হিসেবে পরিচিতি স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তির নামও পাওয়া গেছে। পুরো বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন এ তিন ব্যক্তি।

জাফলংপর্যটকদের ভিড়ে চোরাই চিনি নিয়ে দৌড়ঝাঁপ, বিক্রি হচ্ছে প্রকাশ্যে

একটি সূত্র জানায়, চিনির বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা করে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের দিতে হয়। বিজিবি ও পুলিশের নামে টাকা তুলেন স্থানীয় তিন ব্যক্তি। তবে এদের মধ্যে একজন বর্তমানে কারাগারে থাকায় বাকি দুজন বিজিবি ও পুলিশের কাছে হিসেব বুঝিয়ে দেন।

এ বিষয়ে বিজিবির সংগ্রাম পুঞ্জি বিওপির (সীমান্ত ফাঁড়ি) ক্যাম্প কমান্ডারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানার পরেই ‘কথা স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে না’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এরপর একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, জিরো পয়েন্ট এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন বিজিবি সদস্যরা। অবৈধপণ্য পরিবহনসহ নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা আগেও তাদের সতর্ক থাকতে বলেছি। এ বিষয়ে তাদের আরও কঠোরভাবে দায়িত্ব পালন করতে বলা হবে।

তিনি আরও বলেন, গত সপ্তাহে ওই এলাকার কয়েকটা ঘরবাড়ি থেকে টাস্কফোর্সের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে ২৫৩ বস্তা চিনি উদ্ধার করেছি। পরে এগুলো নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে।

এ বিষয়ে সিলেট জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, পর্যটন কেন্দ্রে চোরাই চিনি পরিবহন ও প্রকাশ্যে বিক্রি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এ বিষয়ে যাচাই করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

আহমেদ জামিল/আরএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।