হালি ৬০ টাকা

‘আগে পরিবারের জন্য এক ডজন ডিম কিনতাম, এখন কিনি ৮টি’

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০৯:৩৪ এএম, ২৮ জুন ২০২৪
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে খুচরা বাজারে এক হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অস্থির ডিমের বাজার। খামারি থেকে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে প্রতিডিমে দাম বেড়ে যায় সাড়ে ৩-৪ টাকা। উপজেলার ১৬ ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার বিভিন্ন বাজারে এক হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খামারিরা প্রতিপিস ডিম বিক্রি করছেন ১০ টাকা ৫০ পয়সা। পাইকারিতে তা ১১ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা পিস।

‘আগে পরিবারের জন্য এক ডজন ডিম কিনতাম, এখন কিনি ৮টি’

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অতিরিক্ত গরমের কারণে ডিমের সরবরাহ করতে না পারায় বাজার চলে গেছে কোম্পানিগুলোর হাতে। ফলে তারা সিন্ডিকেট করে এক রেট ধরে ডিম বিক্রি করছে। এর প্রভাব এসে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের কাঁধে।

ব্যবসায়ীরারা বলছেন, বর্তমানে ডিমের দাম ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। ফলে বেচাকেনাতেও ভাটা পড়েছে। এভাবে দাম বাড়তে থাকলে ক্রেতা সংকটে ডিমগুলো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বড়দারোগাহাটের একজন ডিম ব্যবসায়ী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বড় বড় আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়িয়েছেন। ফলে তাদের কাছ থেকে বাড়তি দরে ডিম কিনতে হচ্ছে। সরকার যদি বিষয়টিতে এখনই নজর না দেয় তাহলে খুচরায় প্রতিপিস ডিমের দাম ১৭ টাকায় ঠেকতে বেশি দিন সময় লাগবে না।’

‘আগে পরিবারের জন্য এক ডজন ডিম কিনতাম, এখন কিনি ৮টি’

মিরসরাই পৌরসদরে বাজার করতে আসা কচুয়া এলাকার শাহীনুল ইসলাম বলেন, ‘ডিমও এখন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। কোনো পণ্যে নিয়ন্ত্রণ নেই। যে যেভাবে খুশি দাম বাড়িয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।’

বড়তাকিয়া বাজারে আসা কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আগে পরিবারের জন্য এক ডজন করে ডিম কিনতাম। দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন এক ডজনের টাকা দিয়ে আটটি ডিম কিনতে হচ্ছে।’

উপজেলার করেরহাট একরাম পোলট্রির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ একরামুল হক বলেন, ‘আমার খামারে পাঁচ হাজার লেয়ার মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় চার হাজার ৫০০ পিস ডিম উৎপাদন হয়। গত কয়েকমাস দাম একেবারে কম ছিল, অনেক টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এখন ভালো দাম পাচ্ছি। এখন পাইকারি ১০০ পিস ডিম ১১৫০ টাকায় বিক্রি করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন লোকসান হয় তখন কেউ খবর রাখে না। কিন্তু যখন দু-এক টাকা লাভ করি তখন হইচই পড়ে যায়। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা কেন অতিরিক্ত দামে বিক্রি করছে বুঝতে পারছি না।’

‘আগে পরিবারের জন্য এক ডজন ডিম কিনতাম, এখন কিনি ৮টি’

উপজেলার খেয়ারহাট বাজারের ব্যবসায়ী শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‌‘আমরা পাইকারিতে আবুতোরাব বাজার থেকে ১৩ টাকা দরে প্রতিপিস ডিম কিনে আনছি। এরমধ্যে পরিবহন খরচ রয়েছে। অনেক ডিম নষ্ট পড়ে, ভেঙে যায়। প্রতিপিস ১৫ টাকা বিক্রি না করলে পোষাবে না।’

পেশায় একজন মাদরাসাশিক্ষক জায়েদ হোসাইন। তিনি বলেন, ‘সীমিত বেতনের চাকরি করি। অনেক হিসেব করে চলতে হয়। এখন সব জিনিসের দাম বেড়ে গেছে। বৃহস্পতিবার কমলদহ বাজার থেকে ৮ পিস ডিম কিনেছি ১২০ টাকা দিয়ে। অথচ কয়েকমাস আগেও ১২০ টাকায় এক ডজন ডিম কিনতে পারতাম।’

মিরসরা উপজেলা ডিম ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ডিমের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এ কারণে বেচাকেনাও কমে গেছে। কিন্তু আমাদেরতো বাড়তি দরে কিনে আনতে হচ্ছে। তাই বাড়তি দরে বিক্রি না করে উপায় নেই।’

এ বিষয়ে করেরহাট বাজার কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, ‘ডিম পচনশীল। এ পণ্যে সিন্ডিকেট করার সুযোগ নেই। মূলত ডিম ব্যবসা এখন করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে চলে গেছে। তারা মুরগির বাচ্চার দাম, খাদ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে পোলট্রি খাতে উদ্যোক্তা কমে গেছে। সবমিলিয়ে ডিমের বাজার বেড়ে গেছে।’

এম মাঈন উদ্দিন/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।