ভোলায় রাসেলস ভাইপার আতংক
হঠাৎ করে দ্বীপ জেলা ভোলায় দেখা মিলছে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার। ছড়িয়ে পড়েছে একের পর এক উপজেলায়। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো উপজেলার নদীর তীরে, বসতবাড়ি, ফসলের মাঠ ও রাস্তা থেকে উদ্ধার হচ্ছে এই সাপ। এতে আতংকে আছেন জেলার নদীর পাড় ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষ।
জেলায় এ পর্যন্ত ছোট-বড় মিলে অন্তত ২০টি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। এরমধ্যে বেশিরভাগ সাপকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।
ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নাছির মাঝি, স্থানীয় বাসিন্দা বাবুল মাঝি ও সিরাজ মাঝি জানান, তারা মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নাছির মাঝি মৎস্য ঘাট সংলগ্ন মেঘনা পাড়ের সিসি ব্লক বাঁধে বসে জাল মেরামত করে আসছেন। হঠাৎ রোববার (২৩ জুন) বিকেলে বাঁধের পাশে একটি বিষধর সাপ দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে মৎস্য ঘাটে নিয়ে আসেন। তখন স্থানীয়রা জানান, এটি ভয়ংকর বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার। পরে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। এ ঘটনার পর জেলেদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে বলে তারা জানান।
ইলিশা ইউনিয়নের জংশন এলাকার ব্যবসায়ী মো. নসু ও নাছির মাঝি মৎস্য ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী মো. রাশেদ বলেন, ‘শুনেছি রাসেলস ভাইপার ভয়ংকর বিষধর সাপ। এটি কাউকে কামড় দিলে মানুষ মারাও যায়। তাই আমিসহ আমরা যারা নদীর পাড়ে ব্যবসা করি, তারা খুব চিন্তিত আছি। কারণ আমরা তো নদীর পাড়ে ব্যবসা করি। রাসেলস ভাইপার আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও ঢুকতে পারে।’
দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন মদনপুর ইউনিয়নের মেম্বার কবির শিকদার বলেন, ‘কয়েকদিন আগে একটি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার হয়েছে। যে কারণে আমরা চরাঞ্চলের মানুষ খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।’
তিনি বলেন, ‘সাপের ভ্যাকসিন (অ্যান্টিভেনম) শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও সদর হাসপাতালে আছে। আমাদের এখান থেকে হাসপাতালে যেতে ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে। বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের মদনপুর ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকে ভ্যাকসিন থাকা জরুরি।’
সাপের কামড়ে প্রাণহানি এড়াতে ভোলার সব হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার দাবি জানান ভোলা শহরের বিবিএস রোড এলাকার বাসিন্দা এম হেলাল উদ্দিন ও কালিবাড়ি রোড এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জমিস উদ্দিন।
এ বিষয়ে ভোলার উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে রাসেলস ভাইপারের বাসস্থান জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় এগুলো এখন বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে। আর এ সাপ সহজে কাউকে কামড় দেয় না।
সাপ না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শীত মৌসুমে এগুলো আবার তার বাসস্থানে ফিরে যাবে।
ভোলা সিভিল সার্জন ডা. কে এম শফিকুজ্জামান জানান, বর্তমানে সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুত রয়েছে। সাপে কাটা রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে আনা এবং বাড়িঘর ও আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এসআর/জেআইএম