৪ কোটি ব্যয়ে সংস্কার

পায়ে লেগে যাচ্ছে সড়কের পিচ, উঠছে কার্পেটিং

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০৭:৩২ পিএম, ২৬ জুন ২০২৪
ঘষা দিলেই পায়ে লেগে যাচ্ছে সড়কের পিচ

নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা সেচ ক্যানাল পরিদর্শনের ৯ কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজ করা হয়েছে সপ্তাহখানেক আগে। ব্যয় হয়েছে প্রায় চার কোটি টাকা। অথচ এরমধ্যেই সড়কের অবস্থা বেহাল হয়েছে। পায়ের ঘষাতেই উঠে যাচ্ছে পিচ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমান ও কম পুরুত্ব দিয়ে অপরিকল্পিত কার্পেটিং করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সড়ক ব্যবহারকারীরা জানান, সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ছোট-বড় যানবাহন চলাচল করে। অথচ সড়ক কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব মাত্র ৭-৯ মিলিমিটার। বিটুমিনও কম দেওয়া হয়েছে। সংস্কারের পর সড়ক গলে ঢিবির মতো উঁচু-নিচু বা ঢেউয়ের আকৃতি ধারণ করেছে। কমপ্রেসার মেশিন দিয়ে সড়ক পরিষ্কার না করে ধুলা-ময়লার ওপরই পিচ ঢালাই করেছেন ঠিকাদার। এতে পথচারীর পায়ে লেগে যাচ্ছে সড়কের পিচ। বসে যাচ্ছে যানবাহনের চাকার দাগ। এমনকি পা দিয়ে ঘষলেই উঠে যাচ্ছে কার্পেটিং।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে চার কোটি টাকা বরাদ্দে তিস্তা সেচ ক্যানালের ডালিয়া-দুন্দিবাড়ী পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৯ কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজ পায় আবুল কালাম নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে কাজটি সম্পন্ন করেন লোকমান হোসেন নামের সাব-ঠিকাদার। শতভাগ ভাঙা পাথর আর উন্নতমানের বিটুমিন দিয়ে রাস্তাটি সংস্কার করার কথা। গত ১৫ জুন সড়ক সংস্কারের কাজ শেষ করেন ঠিকাদার।

৪ কোটি ব্যয়ে সংস্কার, পায়ে লেগে যাচ্ছে সড়কের পিচ, উঠছে কার্পেটিং

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সড়ক-মহাসড়কে যে পিচ ব্যবহার করা হয়, তার মান ৬০-৭০ গ্রেডের। এই পিচের গলনাঙ্ক ৪৮-৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে পিচ গলে যাওয়ার কথা। এর আগে নয়। উপজেলা আবহাওয়া অফিস জানায়, গত কয়েকদিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩২-৩৫ ডিগ্রি। এই তাপমাত্রায় পিচ গলে যাওয়ায় ব্যবহৃত পিচের মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

পিচ গলে যাওয়ার খবর পেয়ে সড়ক পরিদর্শনে আসেন ডালিয়া পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী হাশেম আলী। তিনি জানান, বিটুমিন গলে কার্পেটিং উঠে যাওয়ার বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে।

ওই সড়ক দিয়ে পণ্যবোঝাই পিকআপ ভ্যান নিয়ে জলঢাকা থেকে ডালিয়া আসছিলেন চালক হেলাল উদ্দিন। এসময় তিনি বলেন, ‘১০ বছর ধরে সড়কে পণ্য নিয়ে যাতায়াত করছি। কিন্তু এমনভাবে পিচ গলতে কখনো দেখিনি। এ ধরনের সড়কে যানবাহন চালালে দ্রুত টায়ার নষ্ট হয়। যেকোনো সময় টায়ার ফেটে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

ইজিবাইকচালক কুদ্দুস আলী বলেন, ‘সাত দিনেই সড়কের পিচ গলে উঠে যাচ্ছে। কার্পেটিং অনেক উঁচু-নিচু। যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।’

৪ কোটি ব্যয়ে সংস্কার, পায়ে লেগে যাচ্ছে সড়কের পিচ, উঠছে কার্পেটিং

তবে রাস্তাটির সংস্কারকাজে নিম্নমানের ও কম পরিমাণে পাথর-বিটুমিন ব্যবহারের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঠিকাদার লোকমান। তিনি বলেন, ‘রাস্তার কিছু জায়গায় বিটুমিনের পরিমাণ বেশি পড়েছে। ফলে রোদের তাপে এরকম হচ্ছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী কাজ হয়েছে। দরপত্রেই সড়ক কার্পেটিংয়ের পুরুত্ব ৯ মিলিমিটার ধরা হয়েছে।’

এ বিষয়ে ডালিয়া পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদদৌলা বলেন, ‘আমি গিয়েছিলাম সেখানে। কোথাও এরকম পাইনি। আপনি কোথায় দেখলেন? এরপরও আপনার কোনো জানার থাকলে অফিসে আসেন।’ বলেই কলটি কেটে দেন তিনি।

ইব্রাহিম সুজন/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।