দুশ্চিন্তায় বাবা-মা

রোদে গেলেই শরীরে ফোসকা পড়ে ভিন্ন বর্ণের দুই ভাইয়ের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০১:০৭ পিএম, ২৬ জুন ২০২৪
হরমোনজনিত সমস্যার কারণে দুই ভাই চর্মরোগে আক্রান্ত, এটিকে লিকোডারমা নামে অভিহিত করা হয়

আনোয়ার হোসেনের তিন ছেলে। এরমধ্যে দুই সন্তানের চেহারা ধবধবে সাদা আর চুল সোনালি রঙের। হঠাৎ দেখে অনেকে চমকেও উঠতেও পারেন। মনে হতে পারে কোনো ভিনদেশী। কিন্তু প্রচণ্ড রোদে তাদের কষ্ট হয়। শরীরে ফোসকা পড়ে। চোখে চাপ পড়ে, চামড়া লালচে ও কালচে হয়ে ওঠে। চিকিৎসকরা বলছেন, সঠিক চিকিৎসা নিলে ভালো থাকবেন তারা।

কুড়িগ্রাম জেলার উত্তরের সীমান্ত ঘেঁষা উপজেলা ভরুঙ্গামারী উপজেলার শিলখুড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ ঢলডাঙ্গা মাস্টারপাড়া গ্রামে বসবাস আনোয়ারের পরিবারের।

জানা গেছে, আপন খালোতো বোন নুর নাহারের সঙ্গে বিয়ে হয় আনোয়ার হোসেনের। বিয়ের এক বছর পর জন্ম নেয় প্রথম সন্তান নাঈম ইসলাম। কিন্তু তার ধবধবে চেহারা দেখে চমকে ওঠেন বাবা-মা। এরপর মেজ ছেলে রাকিব ইসলাম একজন সাধারণ বাঙালি ছেলের মতো জন্মগ্রহণ করেন। এরপর তৃতীয় সন্তান বায়েজিদ ইসলাম বড় ভাই নাঈম ইসলামের মতোই সাদা চেহারা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।

আরও পড়ুন:

তিন সন্তান জন্ম নেওয়ার পর কাজের জন্য ঢাকায় চলে আসেন আনোয়ার হোসেন। তিনি ঢাকাতেই দর্জির কাজ করে যে আয় করেন তা দিয়ে কোনো রকমে চলছে তার সংসার। বড় ছেলে নাঈম ইসলাম এইচএসসি পাস করার পর বাবার দুর্দশা ঘোচাতে ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। সেখানে এক বছর কাজ করার পর চোখে কম দেখায় ছেড়ে গত ঈদুল ফিতরের এক সপ্তাহ পর গ্রামে ফিরে যান।

নাঈমের মা নুর নাহার বলেন, ছেলে দুটোর ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। এখন আমরা ওদের দুজনের দেখাশোনা করছি। আমরা মরে গেলে ওদের দুই ভাইয়ের কী হবে? এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

প্রতিবেশী সেকেন্দার আলী বলেন, নাঈম ছাত্র হিসেবে ভালো ছিল। অভাবের কারণে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেনি। এ বয়সে অনেকে সংসারের হাল ধরলেও স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে সে ঘরবন্দি। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি তার একটা চাকরির ব্যবস্থা করতো তাহলে পরিবারটির উপকার হতো।

নাঈম বলেন, আমার চেহারা এমন হওয়ার কারণে কাজ করতে পারি না। রোদে গেলে শরীরে ফোসকা পড়ে। চোখে ঠিকমতো দেখতে পাই না। ছায়ার ভেতরে কোনো কাজের ব্যবস্থা করে দিলে আমার উপকার হতো।

তিনি আরও বলেন, আর্থিক কারণে চোখের ও চর্ম ডাক্তার দেখানো সম্ভব হয়নি। পরিবারের অভাব দূর করতে একটি চাকরি হলে খুব ভালো হতো। আমার এই চেহারা নিয়ে কোনো আফসোস নেই। আমি এতেই খুশি।

কুড়িগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. এস. এম আমিনুল ইসলাম বলেন, হরমোনজনিত সমস্যার কারণে তারা চর্মরোগে আক্রান্ত। এটিকে লিকোডারমা নামে অভিহিত করা হয়। এর ফলে চামড়ায় প্রদাহ হয়। চোখে চাপ সৃষ্টি হয়। এ সমস্যা নিরসনে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে থাকতে হবে।

ফজলুল করিম ফারাজী/জেডএইচ/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।