মিয়ানমারে সংঘাত
মংডু দখলের লড়াইয়ে কাঁপছে এপার
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহর দখল ও নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) এবং দেশটির সেনাবাহিনীর মাঝে তুমুল লড়াই চলছে। শেষ কামড় হিসেবে সর্বশক্তি দিয়ে হামলা চালাচ্ছে আরাকান আর্মি, এমনটি দাবি করছেন এপারের রোহিঙ্গারা।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সারারাতই গোলার বিকট শব্দে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয়েছে এপারের সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের। এ পরিস্থিতিতে টেকনাফের নাফনদ সীমান্তবাসীদের মাঝে নতুন করে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক।
স্থানীয়দের মতে, মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চললেও রাতভর নিরবিচ্ছিন্ন গোলাগুলি চলেছে। অব্যাহত রয়েছে বুধবার সকাল থেকে এখনো। হামলা ও পাল্টাহামলায় সাধারণ রোহিঙ্গারা এলাকা ত্যাগ করে সীমান্তে এসে অবস্থান নিয়েছে। তবে বিজিবির সতর্কাবস্থানে এপারে আসার সাহস পাচ্ছে না।
সীমান্তবাসীদের মতে, ফায়ার করা হচ্ছে মর্টারশেল ও হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া হচ্ছে গোলা। রাখাইনে বিস্ফোরণের সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়ার কুণ্ডলি এপারের সীমান্ত থেকে দেখা যাচ্ছে। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গোলার বিস্ফোরণের দৃশ্য।
টেকনাফের বাসিন্দা আব্দুস সালাম জানান, মঙ্গল ও বুধবার টানা দুই দিনে মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন করে বিস্ফোরণে এপারের টেকনাফ সীমান্ত কাঁপছে। যখন বিস্ফোরণ হয় তখন এপারের বাড়ি-ঘর ভূমিকম্পের মতো কেঁপে ওঠে। এতটাই বিকট শব্দ হচ্ছে অনেকে সীমান্তের কাছেও যেতে পারছে না। এ হামলা-পাল্টাহামলা এখনো চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোহিঙ্গা নেতা জানান, ওপার থেকে খবর পেয়েছি রাখাইনের মংডু টাউনশিপের কাদিরবিল, মংনিপাড়া ও সুদাপাড়া, কাউয়ার বিল, প্যারানপুর গ্রামসহ আশাপাশের অনেক গ্রাম আরাকান আর্মি দখল করে নিয়েছে। মংডু মেইন টাউনশীপ দখলে নিতে আরাকান আর্মি চূড়ান্ত লড়াই শুরু করেছে। আর এটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও। দু’পক্ষের হামলার ঘটনায় রাখাইনে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা তাদের বাড়ি-ঘর ছেড়ে সীমান্তের কাছে অবস্থান নিয়েছেন।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, মিয়ানমার রাখাইনে বিস্ফোরণের বিকট শব্দে এপার কাঁপছে। রাতে ঘুমাতে পারিনি। সকালেও এপারে ঠিকমতো বসা যাচ্ছে না। দিনের পর দিন এমন ঘটনায় এপারের কৃষক, শ্রমিক ও জেলেসহ নাফনদী ও সাগর নির্ভর মানুষ কষ্টে জীবন-যাপন করছেন।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী জানান, সীমান্তের অধিবাসীদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আবারো মিয়ানমার থেকে থেমে থেমে মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ এপারে শোনা যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল জোরদার রেখেছে। ওপারে যাই হোক, মিয়ানমারের কোনো নাগরিক এপারে ঢোকার সুযোগ পাবে না।
এফএ/এএসএম