সিলেটে থামছেই না বৃষ্টি, শহরে হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি
অবিরাম বর্ষণ ও উজানের ঢলে সিলেটের নদ-নদীর পানি বেড়েই চলেছে। নদ-নদীতে পানি না কমায় নতুন করে তলিয়ে যাচ্ছে নগরীর বিভিন্ন এলাকা। শহরে কোথাও হাঁটু আবার কোথাও কোমরসমান পানি বিরাজ করছে।
বুধবার (১৯ জুন) সকাল থেকে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় নগরীর অভিজাত এলাকা উপশহর, তালতলা, জামতলা, ছড়ারপাড়, শেখঘাট, মাছিমপুর, ঘাসিটুলা, শামীমাবাদ ও বাগবাড়িসহ বিভিন্ন নিচু এলাকা তলিয়ে যেতে শুরু করে। দুপুর ১২টার দিকে কয়েকটি এলাকায় হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি দেখা গেছে। এতে চরম আতংকে রয়েছেন বাসিন্দারা। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে শুরু করেছেন।
এদিকে, নগরীর বিভিন্নে এলাকার মসজিদে মাইকিং করে পানিবন্দি মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে যেকোনো সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
নগরীর শামীমাবাদ এলাকার ১ নম্বর রোডের বাসিন্দা জাহিদুল হক বলেন, ‘ঈদের দিন ভোরের দিকে ঘরে কোমরসমান পানি ওঠে যায়। আকস্মিক পানিতে ঘরের অনেক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যায়। এতে ঈদের আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে। আজ সকালে ফের কোমরসমান পানি হয়েছে ঘরের মধ্যে।’
উপশহর এলাকার সাব্বির আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদের দিন থেকে বাসায় হাঁটুসমান পানি। ইটের ওপর খাট রেখে কোনোমতে থাকতে হচ্ছে। পানি গতকাল কিছুটা কমলেও আজ ফের বাড়তে শুরু করেছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে আর বাসায় থাকা সম্ভব হবে না। আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
আরও পড়ুন
- সিলেটে বন্যার মধ্যে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস
- সিলেট সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল
- বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, সিলেটের সব পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা
গতমাসের শেষ সপ্তাহে সিলেটে বন্যা দেখা দেয়। ১৩টি উপজেলাসহ ডুবেছিল সিলেট শহরও। তবে ৮ জুনের পর অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হয়। সেই রেশ না কাটতেই রোববার (১৬ জুন) রাত থেকে অবিরাম ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়। সোমবার ভোরেই তলিয়ে যায় নগরীর বেশিরভাগ এলাকা। সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, জকিগঞ্জ, কানাইঘাটসহ বিভিন্ন উপজেলায় বাড়তে শুরু করে পানি। এতে ঈদের জামাত আদায় ও কোরবানি দিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন নগরবাসী। এ পরিস্তিতিতে সীমাহীন কষ্টের মধ্যে ঈদ উদযাপন করেছেন সিলেটবাসী।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) বলছে, নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে এরইমধ্যে ২২টি ওয়ার্ড বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। এসব ওয়ার্ডের অন্তত ৮০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগরীতে ৮০টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
সিসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর বলেন, মেয়রের নির্দেশনায় আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়াও বন্যাকবলিত এলাকায় রান্না করা ও শুকনা খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। ময়লা-আবর্জনা অপসারণে প্রতিটি ওয়ার্ডে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা কাজ করছেন।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আজ ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরীতে ৮২ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। একইসময় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন বলেন, আগামী ৭২ ঘণ্টায় সিলেটে মাঝারি থেকে অতিভারী বর্ষণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এসময় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে।
আহমেদ জামিল/এসআর/জিকেএস