দৌলতদিয়ায় ঈদযাত্রায় স্বস্তির আশা
এক সপ্তাহ পরই পবিত্র ঈদ-উল-আজহা। ঈদে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের উভয় ঘাটে যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এবারের ঈদে পশুবাহী ট্রাক, যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে দৌলতদিয়া ঘাট কর্তৃপক্ষসহ প্রশাসন।
ঈদের সময় পশুবাহী ট্রাকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পারাপারের পাশাপাশি যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে চলাচল করবে ছোট-বড় ১৮টি ফেরি ও ২০টি লঞ্চ। দৌলতদিয়া প্রান্তের ৭টি ফেরি ঘাটের মধ্যে সচল রয়েছে ৩টি ঘাট। এছাড়া একইসঙ্গে যাত্রী পারপারে প্রস্তুত রয়েছে লঞ্চঘাট। ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে ঘাট এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের পাশাপাশি থাকবে জেলা পুলিশের ৪ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এদিকে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঈদের আগে ও পরে নদীতে বন্ধ থাকবে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল। জরুরি পচনশীল পণ্যবাহী ট্রাক ব্যাতীত সকল ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক পারাপারও এ সময় বন্ধ থাকবে। এছাড়া সড়ক ও ঘাট এলাকায় নিয়ন্ত্রণ করা হবে ছোট গাড়ি মাহেন্দ্রা, অটোরিকশা ও অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বা যাত্রী হয়রানি করা হলে নেওয়া হবে আইনানুগ ব্যবস্থা।
বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ দৌলতদিয়া ঘাট সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া প্রান্তে ৭টি ফেরিঘাট থাকলেও সচল রয়েছে ৩টি। সচল ঘাটগুলো হলো- ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট। তবে এবার ৩টির পাশাপাশি ৬ নম্বর ঘাট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সচল রয়েছে দৌলতদিয়া প্রান্তের লঞ্চ ঘাটটিও।
পশু ব্যাপারী মঞ্জরুল ইসলাম, আব্দুল লতিফ ও মনিরুল ইসলাম বলেন, এবার পথে কোনো দুর্ভোগ বা চাঁদাবাজ নেই। ভালোভাবে গরুবোঝাই ট্রাক নিয়ে ঘাটে এসে ফেরিতে উঠতে পারছি। তবে ওয়েস্কেলে গাড়িসহ গরুর ওজন করে আসার পরও ঘাটে তাদের কাছ থেকে যাত্রী হিসেবে ভাড়া নিচ্ছে। এটাতো ঠিক না। কারণ তারা ওয়েস্কেলে ওজন অনুযায়ী টাকা দিয়ে এসেছেন। এ বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।
যানবাহনের চালক মহিদুল ইসলাম, মো. রবিন, পিন্টু হোসেন ও সুমন বলেন, আগে ঈদের সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দৌলতদিয়া প্রান্তের সড়কে আটকে থেকে ভোগান্তি পোহালেও পদ্মা সেতু চালুর পর তাদের দুর্ভোগ দূর হয়েছে। বর্তমানে এ রুটে কোনো রকম অপেক্ষা ছাড়াই সরাসরি পশুবাহী ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন ফেরিতে উঠতে পারছে এবং সড়কে কোনো চাঁদাবাজি বা দুর্ভোগ নেই।
তবে ঈদে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় এবং এখন পদ্মায় পানি বৃদ্ধির কারণে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে। সেদিক বিবেচনা করলে কর্তৃপক্ষ সচল ফেরিঘাট ভালো রাখা ও সবগুলো ফেরি ঠিকঠাক চালু রাখলে ভোগান্তি ছাড়াই নদী পার হওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
দৌলতদিয়া লঞ্চঘাটের সুপারভাইজার মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ঈদে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ২০টি লঞ্চ চলাচল করবে। এরইমধ্যে তাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরুটে চলাচলকারী লঞ্চের ফিটনেসও ভালো আছে।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, এই ঈদে ছোট বড় ১৮টি ফেরি দৌলতদিয়ার ৩টি ফেরিঘাট দিয়ে চলাচল করবে। প্রয়োজন হলে আরও একটি ঘাট বাড়ানো হবে। এই ঘাট ও ফেরির মাধ্যমে ঈদে সকল যাত্রী ও যানবাহনগুলোকে ভালোভাবে পারাপারের পাশাপাশি পশুবাহী ট্রাকগুলোকে দ্রুততার সঙ্গে পারাপারের ব্যবস্থা করেছেন এবং পশুবাহী ট্রাকগুলো ঘাটে আসা মাত্র টিকিট নিয়ে ফেরিতে উঠতে পারছে।
রাজবাড়ী পুলিশ সুপার জি.এম. আবুল কালাম আজাদ (পিপিএম) বলেন, ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে ঘাট এলাকায় জেলা পুলিশের ৪ স্তরের নিরাপত্তা থাকবে। ট্রাফিক পুলিশ, গোয়ালন্দ ঘাট থানা ও জেলা পুলিশসহ অন্যান্য সবাই মিলে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করবেন। যাত্রী হয়রানি, ছিনতাইকারী ও দালালচক্র রোধে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছেন। এছাড়া যানজট সৃষ্টি হলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যানজট নিরসনেরও ব্যবস্থা রেখেছেন।
রুবেলুর রহমান/এফএ/জেআইএম