প্রশিক্ষণের নামে ছুটি নিয়ে অন্য কলেজে ক্লাস নেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ০৭:১৬ পিএম, ০৯ জুন ২০২৪

প্রশিক্ষণের নামে এমপিওভুক্ত মাদরাসা থেকে ছুটি নিয়ে অন্য কলেজে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে বায়জিদ হোসেন নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। ওই মাদরাসার অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগসাজসে পাঁচ মাস ধরে বেতনও উত্তোলন করেছেন।

বায়জিদ হোসেন কুড়িগ্রাম আলিয়া কামিল মাদরাসার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত এমপিওভুক্ত শিক্ষক। ছুটি নিয়ে তিনি সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে কর্মরত রয়েছেন।

দুই প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে এসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের ওয়েবসাইটে ওই শিক্ষকের ছবিসহ কর্মরত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

মাদরাসা সূত্রে জানা গেছে, বায়জিদ হোসেন এনটিআরসিএর চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে ২০২৩ সালের অক্টোবরে মাদরাসার আইসিটি বিষয়ের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। পরে তিনি এমপিওভুক্ত হন। জানুয়ারি মাস থেকে তিনি মাদরাসায় অনুপস্থিত। তবে মাদরাসা থেকে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন।

ওই মাদরাসার আইসিটি বিষয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক আরিফুল ইসলাম আকাশ বলেন, এ বিষয়ে অন্য কোনো শিক্ষক আছেন কি না আমি জানি না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৪ তারিখ থেকে আমি নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছি। এ সময় আইসিটি বিষয়ের অন্য কোনো শিক্ষক দেখতে পাইনি।

একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বায়জিদ হোসেন অধ্যক্ষ নূর বখতের সঙ্গে লিয়াজো করে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। দুই প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি বেতনও উত্তোলন করছেন। হাজিরা খাতা ও বেতন বিলের কাগজপত্রে কীভাবে তার স্বাক্ষর দেওয়া হয় সেটি জানেন না তারা।

মাদরাসার শিক্ষক প্রতিনিধি (টিআর) মাজেদুল ইসলাম বলেন, আইসিটি শিক্ষক বায়জিদ হোসেন অনেকদিন ধরে মাদরাসায় আসেন না। শুনেছি তিনি ট্রেনিংয়ে আছেন। কিসের ট্রেনিং সেটি জানি না।

সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের আইসিটি বিভাগের প্রধান সারওয়ারর্দী আলম বলেন, বায়জিদ আগে আমাদের স্কুল শাখার শিক্ষক ছিলেন। মাদরাসায় চাকরি হওয়ার পর তিনি ইস্তফা দেন। তাকে রাখার জন্য প্রস্তাব দিলে তিনি কলেজের প্রভাষক পদে যোগদানের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে পাঁচ মাস আগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এমনকি তার স্ত্রীকেও চাকরি দেওয়া হয়। তিনি কলেজে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন। তিনি এখনও ওই মাদরাসায় কর্মরত রয়েছেন সেটি আমাদের জানা নেই।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রভাষক বায়জিদ হোসেন বলেন, অধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলে আমি ৩০ জুন পর্যন্ত প্রশিক্ষণকালীন ছুটি নিয়েছি। আমি যেখানে আছি সেটি এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠান নয়।

এমপিওভুক্ত শিক্ষক হয়ে অন্য কলেজে নিয়োগ নিয়ে উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন উত্তোলন কতটা বিধিসম্মত, এমন প্রশ্নের জবাবে বায়জিদ দাবি করেন, ১ জুন আলিয়া মাদরাসায় ইস্তফা দিয়েছেন। তিনি যে বেতন উত্তোলন করেছেন সেটি ফেরত দিতেও প্রস্তুত রয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা নূর বখ্ত বলেন, বায়েজিদ ৩০ জুন পর্যন্ত প্রশিক্ষণকালীন ছুটিতে রয়েছেন। এরপর যোগদান না করলে তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

যোগদানের পরপরই প্রশিক্ষণের নামে ছুটি নিয়ে অন্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকা ও উভয় প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন উত্তোলন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত না থাকলে সমস্যা নেই।

জেলা প্রশাসক ও মাদরাসা গভর্নিং বডির সভাপতি মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ বলেন, এটা গুরুতর অনিয়ম। তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ফজলুল করিম ফারাজী/আরএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।