স্ক্যানার না থাকায় বুড়িমারী দিয়ে আসছে অবৈধ পণ্য
লালমনিরহাটের বুড়িমারী স্থলবন্দরে স্ক্যানার না থাকায় আমদানিকৃত পণ্যের গাড়িতে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে কোটি টাকার পণ্য। এতে নানামুখী সংকটে পড়েছে এ স্থল ও শুল্ক স্টেশন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ভারতীয় ট্রাকে মালামাল নিয়ে বাংলাদেশের প্রবেশ করছে। ট্রাকগুলোতে শুধুমাত্র কাগজপত্র যাচাই করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। ভারতীয় ট্রাকগুলোতে পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য দেখা গেলেও ভিতরে ভিন্ন মালামাল পরিবহন করছে। এতে একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা সরকারকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে কোটিপতি বনে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থলবন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকে অধিক হারে পাথর আমদানি করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ৪০০-৬০০ গাড়িতে পাথর ও অন্যান্য পণ্য আমদানি-রপ্তানি চলে। ঋণপত্র (এলসি) অনুযায়ী এসব গাড়িতে আনা পণ্যের সঠিকতা যাচাই করা হয় অনুমান করে। গুরুত্বপূর্ণ এ শুল্ক স্টেশনে স্ক্যানার না থাকায় অসাধু ব্যবসায়ীরা আমদানি করা পণ্যের গাড়ির ভেতরে ভারতীয় শাড়ি, থ্রিপিস, কসমেটিকস্, গয়না, চিকিৎসা সামগ্রী নিয়ে আসছেন।
১২ মার্চ ভারতের কোলকাতার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান অভিক অ্যান্ড সন্সের নিকট ১৮ মেট্রিক টন চায়না ক্লে পাউডার আমদানির অর্ডার করেন ঢাকার মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ। পণ্যগুলো ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ৬ মে বুড়িমারীতে আনা হয়। পণ্যগুলো যাচাই করে আমদানিকারকের প্রতিনিধিকে বুঝিয়ে দেন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিনেও পণ্য বুঝে না পেয়ে পাটগ্রাম থানা ও গাজীপুরের টঙ্গী থানায় মামলা করেন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান। এতে গাজীপুর ডিবি পুলিশের একটি দল মামলার আসামি বুড়িমারী ইউনিয়নের তুহিনুজ্জামান বাবু ও মনোয়ার হোসেনকে আটক করে। ২০ দিন পর হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতা ইউনিয়নের একটি বাড়ি থেকে ক্লে পাউডার উদ্ধার করা হয়।
এ সময় উদ্ধার পাউডারের ভেতর অবৈধভাবে থেকে আনা ১০ কার্টন সিটি গোল্ডের বিভিন্ন গহনা, ইনজেকশন সিরিঞ্জ, কেনুলার কার্টনসহ অন্যান্য পণ্য বের হয়। এসব পণ্যের মূল্য প্রায় কোটি টাকা। একইভাবে গত ২০২৩ সালের ২৭ মার্চ ও এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পাথরবোঝাই ট্রাকে অবৈধভাবে আনা হয় কয়েক কোটি টাকার নানা পণ্য।
একাধিক আমদানি-রপ্তানিকারক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দাবি করেন, ভারত-বাংলাদেশের একটি কুচক্রিমহল বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে ব্যবসায়ী প্রতিহিংসায় নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এতে শত শত আমদানি-রপ্তানিকারকরা চিন্তিত।
নাম প্রকাশ না করে এক ব্যবসায়ী বলেন, বুড়িমারী স্থল বন্দরে পাথর, গম, ভুট্টার পণ্যের ভিতরে ভারত থেকে অবৈধ মালামাল বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। এতে করে বুড়িমারী স্থলবন্দরের কয়েকজন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী রাতারাতি কোটিপতি হয়েছেন।
বুড়িমারী স্থলবন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুজ্জামান সায়েদ বলেন, একটি চক্র পাথর আমদানির নামে ভারত থেকে শাড়ি ও থ্রিপিস, সুগন্ধি ক্যামিকেল, কসমেটিক, চিকিৎসা সামগ্রীসহ নানা পণ্য অৗবধভাবে নিয়ে আসছেন। তাদের বিরুদ্ধে কাস্টমস কর্তৃপক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
এ ব্যাপারে বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনের (কাস্টমস) সহকারী কমিশনার নাজমুল হাসান বলেন, কাস্টমসে দায়িত্বরত সবাই কয়েকধাপে পণ্য আমদানি ও রপ্তানির গাড়ি সমূহ চেক করে। কোনো গাড়ি সন্দেহ হলে খালি করে দেখা হয়। অবৈধভাবে কোনো মালামাল আনলে ও ধরা পড়লে কাস্টমস আইনে তার লাইসেন্স বাতিল করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
রবিউল হাসান/আরএইচ/জেআইএম