বান্দরবানেও বেনজীরের ৮০ একর জমির খোঁজ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বান্দরবান
প্রকাশিত: ১১:২৩ এএম, ০২ জুন ২০২৪
ছবি জাগো নিউজ

পুলিশের সাবেক আইজি বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-কন্যার নামে বান্দরবানে রয়েছে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি। এসব সম্পত্তি দেখাশোনা করেন বান্দরবান জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াইচিং মারমা।

স্থানীয়রা জানান, বান্দরবান পৌরসভার মধ্যমপাড়া এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে শাহজাহানের কাছ থেকে বান্দরবান সদর উপজেলার ৩১৪ নম্বর সুয়ালক মৌজায় ৬১৪ নম্বর দাগের ৩ নম্বর সিটে ২৫ একর লিজের জমি ক্রয় করেন বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর। যেখানে গড়ে তুলেছেন গবাদিপশুর খামার, মৎস্য প্রজেক্ট, ফলজ, সেগুন বাগান ও বিলাসবহুল খামারবাড়ি। এই খামারবাড়িতে রয়েছে অন্তত অর্ধকোটি টাকারও বেশি গবাদিপশু।

বান্দরবানেও বেনজীরের ৮০ একর জমির খোঁজ

এছাড়া লামা উপজেলার সরই ডলুছড়ি মৌজার টংগো ঝিরিতে রয়েছে আরও অর্ধশত একরেরও বেশি জায়গা। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে এসব জায়গা দখলে নিতে সহায়তা করেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াইচিং মারমা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সুয়ালকের মাঝের পাড়ার চা অফিস থেকে পৌনে ১ কিলোমিটার দূরে ২৫ একর জমিজুড়ে রয়েছে ‘নেচার হিল এগ্রো’ নামে গরু-মৎস্য খামার, সেগুনসহ বিভিন্ন ফল ও ফুলের বাগান, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোতলা পাকা দালান।

খামারটিতে কাজ করছেন শ্রমিকরা। এদের মধ্যে লেদু মিয়া জানান, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ওয়াইচিং মারমার নেতৃত্বে বেনজীর আহমেদের এই খামারে গত এক মাস ধরে গরুগুলো দেখাশুনা করছেন তিনি।

বান্দরবানেও বেনজীরের ৮০ একর জমির খোঁজ

লামা উপজেলার সরই ডলুছড়ি টংগো ঝিরি বাগানের কেয়ারটেকার মো. ইব্রাহিম জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেনজীর আহমেদের ৫৫ একর জায়গা দেখাশোনা করছেন তিনি। আগে মং ওয়াইচিং বেতন পরিশোধ করলেও গত ৫ মাস ধরে কোনো বেতন পরিশোধ না করায় অতিকষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াই চিং জানান, পার্শ্ববর্তী জায়গা থাকার সুবাদে সুয়ালকের মাঝের পাড়ায় বেনজীর আহমেদের ২৫ একর জায়গা দেখাশুনার দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়েছে। তবে লামার জায়গা-জমি সংক্রান্ত কোনো বিষয়ে তার জানা নেই।

আরও পড়ুন

সুয়ালক ইউপি চেয়ারম্যান উ ক্য নু মারমা বলেন, বেনজীর আহমেদের সুয়ালক মৌজার মাঝের পাড়ায় জায়গা আছে তা আমি জানি। জায়গাটি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মং ওয়াই চিং দেখাশুনা করেন। মাঝে মাঝে একজন এসপিও এখানে আসেন। তবে তার নাম জানি না। জায়গাটি সকলের কাছে এসপির জায়গা হিসেবে পরিচিত। সম্প্রতি বাগানটিতে জোত পারমিট করা হয়েছে। তবে বেনজীর আহমেদ জায়গাগুলো কীভাবে নিয়েছেন তা তিনি জানেন না।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, বান্দরবানে বেনজীর আহমেদের জায়গা-জমির তথ্য বা জবরদখল সংক্রান্ত কোনো বিষয় তার জানা নেই। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

বান্দরবানেও বেনজীরের ৮০ একর জমির খোঁজ

এর আগে ২৬ মে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা, কন্যা ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর, তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীর ও জারা জেরিন বিনতে বেনজীরের সম্পত্তি ক্রোক ও ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আদেশের পর বেনজিরের স্ত্রী ও মেয়ের ফ্ল্যাট ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। ক্রোকের আদেশ দেওয়া চারটি ফ্ল্যাট ঢাকার গুলশানে অবস্থিত র‌্যানকন আইকন টাওয়ারে। চারটি ফ্ল্যাটের দলিলমূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

এসব ফ্ল্যাটের তিনটি রয়েছে তার স্ত্রী জীশান মির্জার নামে। স্ত্রীর নামে ভবনটির ১৩ ও ১৪ তালায় থাকা তিনটি ফ্ল্যাটের দলিলমূল্য ১ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া মেয়ে জারা জেরিন বিনতে বেনজীরের নামে ভবনটির ১৪ তলায় ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা দলিলমূল্যের একটি ফ্ল্যাটও রয়েছে জব্দের আদেশের তালিকায়।

এদিকে দুইদিনে বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জীশান মির্জা ও তিন কন্যার ১৯৮ একর জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। যার দলিলমূল্য ২০ কোটি ৭১ লাখ ৯ হাজার টাকা। এছাড়া বেনজীরের পরিবারের ৩৮টি ব্যাংক হিসাব ফ্রিজ এবং পরিবারের মালিকানার কোম্পানিও ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সব মিলিয়ে অ্যাকাউন্ট এবং কোম্পানি বাদেও দুইদিনে বেনজীরের পরিবারের প্রায় ২৩ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেন আদালত।

নয়ন চক্রবর্তী/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।