ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারককে অবরুদ্ধ, দুই ছাত্রলীগ নেতার কারাদণ্ড

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মির্জাপুর (টাঙ্গাইল)
প্রকাশিত: ১০:৩৮ এএম, ০১ জুন ২০২৪

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আচরণবিধি না মানার অপরাধে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একই অপরাধে উয়ার্শী ইউপির চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মল্লিক হুরমহলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ এবং উয়ার্শী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইশাদ আহম্মেদ মল্লিক নিশাত। শুক্রবার (৩১ মে) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান এই আদেশ দেন।

জানা গেছে, শুক্রবার বিকেলে উপজেলার উয়ার্শী ইউনিয়নের সাফর্ত গ্রামের হালিম খান গজনবীর বাড়িতে চেয়ারম্যান প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এস এম মুজাহিদুল ইসলাম মনির (কাপ পিরিচ), ভাইস চেয়ারম্যান শওকত হোসেন (টিউবওয়েল) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহবুবা শাহরীনের (কলস) উঠান বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠক শেষে উপস্থিত সকলের মাঝে পিকআপ থেকে বিরিয়ানির প্যাকেট বিতরণ করা হচ্ছিল।

খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান ওই বাড়িতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালান। এ সময় ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মল্লিক হুরমহল ও ছাত্রলীগ নেতারা ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকের সঙ্গে তর্কে জড়ান। এক পর্যায়ে বিচারকের সঙ্গে থাকা আনসার সদস্যদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। এ সময় নেতাকর্মীরা বিচারককেও ধাক্কা দেন। ধাক্কাধাক্কিতে আশিকুর ও সোহেল নামে দুই আনসার সদস্যের প্যান্ট ছিঁড়ে যায় এবং তারা আহত হন। এছাড়া এ ঘটনায় আশিকুরের পরিচয়পত্রও খোয়া যায় বলে জানা গেছে।

এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকের নির্দেশনা না মেনে ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মল্লিক হুরমহল, উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ ও উয়ার্শী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইশাদ আহম্মেদ মল্লিক নিশাত উঠান বৈঠকে আসা কর্মী সমর্থকদের মাঝে খাবারের প্যাকেট বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত এবং বিচারককে অবরুদ্ধ করে রাখেন।

পরিবেশ উত্তপ্ত হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ নুরুল আলমকে অবহিত করেন এবং সহযোগিতা চান। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ নুরুল আলম বিষয়টি জানতে পেরে রাত সোয়া ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে জনতাকে ছত্রভঙ্গ করেন। এসময় ইউপি চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগের দুই নেতা ও ওই বাড়ির মালিককে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে নিয়ে আসেন। সেখানে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মাসুদুর রহমান ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুল আলম মল্লিক হুরমহলকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এছাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ ও উয়ার্শী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ইশাদ আহম্মেদ মল্লিক নিশাতকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

এ খবর পেয়ে উপজেলা, পৌর ও কলেজ শাখা ছাত্রলীগ ছাড়াও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ অবস্থায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রাত পৌনে একটার দিকে নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বর ত্যাগ করলে একটার দিকে কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দুই ছাত্রলীগ নেতাকে টাঙ্গাইল জেলহাজতে পাঠানো হয় বলে মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. করিম জানিয়েছেন।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক মো. মাসুদুর রহমান জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৬ ৩২(১) ধারায় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় এবং একই ধারায় দুইজনকে সাত দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এস এম এরশাদ/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।