নিজের ছোট ভাইকে হত্যা করেন কাদের মির্জা, অভিযোগ আরেক ভাইয়ের
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে তার এক ভাইকে হত্যার অভিযোগ তুলেছেন ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন। এছাড়া কাদের মির্জা অস্ত্র মজুত করে হেলমেট বাহিনী দিয়ে নির্বাচনের মাঠে সন্ত্রাস করছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
রোববার (২৬ মে) বিকেলে বসুরহাট পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে নিজের নির্বাচনী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন শাহাদাত হোসেন। তিনি তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কোম্পানীগঞ্জে টেলিফোন প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
মেয়র আবদুল কাদের মির্জা ও চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাদাত হোসেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাই। কাদের মির্জা ঢাকার ব্যবসায়ী গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুলকে (আনারস) চেয়ারম্যান প্রার্থী দিয়ে ভাই শাহাদাতের বিরুদ্ধে ভোট করছেন।
শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘গত তিন বছর মেয়র কাদের মির্জা কোম্পানীগঞ্জ এলাকাকে অশান্ত করে রেখেছেন। আমার বড় ভাই ওবায়দুল কাদেরকে এখনো লাইভে খারাপ কথা প্রকাশ করার হুমকি দিয়ে জিম্মি করে রেখেছেন। আমরা ফোন দিলে তিনি ধরেন না। আমরা পাঁচ ভাই হলেও এখন ওবায়দুল কাদের ও কাদের মির্জাই শুধু ভাই। আমাদের এক ভাইকে কাদের মির্জা হত্যা করেছেন। এর দোষ চাপিয়েছেন ওবায়দুল কাদেরের ওপর।’
শাহদাত হোসেনরা পাঁচ ভাই—ওবায়দুল কাদের খোকন, ফজলুল কাদের মিন্টু, আবদুল কাদের মির্জা, শাহাদাত হোসেন ও দেলোয়ার হোসেন। এদের মধ্যে ২০১০ সালে দেলোয়ার আত্মহত্যা করেন। কাদের মির্জা তাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ শাহাদাত হোসেনের।
সংবাদ সম্মেলনে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘মেয়র কাদের মির্জা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে অস্ত্র মজুত করেছেন। তিনি হেলমেট-হাতুড়ি বাহিনী গঠন করে আমার কর্মীদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। এখন কেউ আমার এজেন্ট হতে চাচ্ছে না। প্রশাসনও তাদের পক্ষে, মন্ত্রীকেও (ওবায়দুল কাদের) তিনি জিম্মি করেছেন। তিনি আমার ফোন ধরেন না।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘মেয়রের ছেলে তাশিক মির্জা তার কালো গাড়িকে টর্চার সেল বানিয়ে আমার কর্মীদের নির্যাতন করে আসছে। শনিবার রাতে বসুরহাটে আমার ছেলে আসাদ হোসেনকে তাশিক মির্জার লোকজন পিটিয়ে আহত করেছে। বিষয়টি আমি কোম্পানীগঞ্জ থানায় জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জেলা প্রশাসককে ফোন দিলেও তিনি ধরেননি।’
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দলের কোনো প্রার্থী নাই, সবাই যেন উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দেয়। কিন্তু কোম্পানীগঞ্জে একজনকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বলে প্রচার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনও আমাদের বিপক্ষে। এর সমাধানসহ আমি কোম্পানীগঞ্জে সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করি।’
‘বসুরহাট-সোনাপুরের সড়ক ও জনপথের রাস্তার বরাদ্দ দিয়েছেন ওবায়দুল কাদের’ জানিয়ে শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘এখন সেখান থেকে ১৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে লুটপাট করা হয়েছে। এটা জনগণের টাকা। এখন ঠিকাদার রাস্তার কাজ খারাপ করছে, কেউ কথা বলছে না। সেতুমন্ত্রীর এলাকায় এমন ঘটনায় আমরা বিব্রত।’
এসব বিষয়ে জানতে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে তার ছেলে মির্জা মাশরুর কাদের তাশিক জাগো নিউজকে বলেন, ‘বহিরাগত লোকজন আমাদের পরিবারে মধ্যে ঢুকে আমাদের মধ্যে হানাহানির চেষ্টা করছেন। আসাদ হোসেন (শাহাদাতের ছেলে) আমার ছোট ভাই। তাকে হামলা করা হয়নি, এটা ভুল বোঝাবুঝি।’
আগামী ২৯ মে তৃতীয় ধাপে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ, সদর ও বেগমগঞ্জ উপজেলায় ভোট হবে। কোম্পানীগঞ্জের এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে চারজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চেয়ারম্যান পদে গোলাম শরীফ চৌধুরী পিপুল (আনারস) এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন (টেলিফোন) ছাড়াও অন্য প্রার্থীরা হলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল (দোয়াত কলম) ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওমর আলী রাজ (মোটরসাইকেল)।
ইকবাল হোসেন মজনু/এসআর/জিকেএস