বন কার্যালয়েই চলছে বৃক্ষ নিধন
বন অধিদপ্তরের ৯টি কার্যাবলির একটি হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বনায়নে সহায়তা ও উৎসাহ দেওয়া। বৃক্ষরোপণ এবং কৃষি বনায়নের বিষয়ে কারিগরি উপদেশ ও সহায়তা করা।
কিন্তু উল্টো কাজ করেছে শরীয়তপুরের বন অফিস। গত দুই বছরে জেলায় কোনো গাছ লাগায়নি তারা। এবার নিজেদের কার্যালয়েই ৫০টি বড় গাছ কাটছে তারা। বন বিভাগের দাবি, চারাগাছ রক্ষায় বড় গাছগুলো কাটছে তারা।
জেলা বন অফিস সূত্রে জানা যায়, বন কার্যালয় প্রাঙ্গণে লাগানো ৫০টি গাছ কাটতে গত বছরের অক্টোবর মাসে ফরিদপুর বিভাগীয় কার্যালয় থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়। এদের মধ্যে ২৪টি গাছ গত বছরের নভেম্বর মাসে নিলামে তোলা হয়, যা ১ লাখ ২৬ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। বাকি ২৬টি গাছ নিলামের জন্য লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। নিলামে বিক্রি হওয়া ২৪টি গাছ ইতোমধ্যে কাটা শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাপপ্রবাহের মধ্যে বন বিভাগের গাছ কাটার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জেলার সচেতনমহল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বন কার্যালয়ের মধ্যে দুটি সারিতে ৫০টি গাছ লাল রং দিয়ে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বাম সারিতে লাগানো ২৪টি মেহগনি, দেবদারু ও আকাশ মনি গাছ কাটার প্রক্রিয়া চলছে। ১৩টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়া তিনটি গাছের ডালপালা ছেঁটে ফেলেছেন শ্রমিকরা। গাছগুলো কাটার পর করাত দিয়ে বিভিন্ন আকার বানিয়ে কাছেই জড়ো করে রাখা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা নয়ন বলেন, ‘গত দুই বছরে শরীয়তপুরে কোনো গাছ লাগায়নি বন বিভাগ। চলমান তাপপ্রবাহে যেখানে বৃক্ষরোপণ ও বৃক্ষ রক্ষার দায়িত্ব বন বিভাগের, সেখানে উল্টো তারা গাছ বিক্রি করছে। আমরা এলাকাবাসী এ গাছ কাটা বন্ধের দাবি জানাই।’
এ বিষয়ে স্থানীয় সমাজকর্মী অ্যাডভোকেট তৌহিদ কোতোয়াল বলেন, ‘সরকারের উচিত এই তীব্র তাপপ্রবাহ মোকাবিলা করতে নতুন করে গাছ লাগানো। কিন্তু শরীয়তপুরের বন কর্মকর্তা দায়িত্বে অবহেলা করে গাছগুলো কাটছেন। এর আগেও তিনি বিভিন্ন জায়গার বেশ কিছু গাছ কেটে ফেলেছেন। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অচিরেই এই গাছ কাটা বন্ধ করার পাশাপাশি নতুন করে গাছ লাগানোর দাবি জানাই।’
গাছ কাটার বিষয়ে জেলা বন কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন বলেন, ‘বন বিভাগের নার্সারির ছোট গাছগুলোতে ছায়া পড়ে বলেই বড় গাছ কাটা হচ্ছে। তাছাড়া সারাদেশেই গাছ কাটা হচ্ছে, আবার লাগানোও হচ্ছে। আমরা এবার ১৯ হাজার গাছ লাগাবো।’
গত দুই অর্থবছরে জেলায় কোনো গাছ লাগানো হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘প্রজেক্ট না থাকায় গাছ লাগানো হয়নি। তাছাড়া রাস্তার পাশে গাছ লাগানোর জায়গা নেই আমাদের।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দীন আহাম্মেদ বলেন, ‘বন বিভাগের অফিসের মধ্যে গাছ কাটার বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি।’
বিধান মজুমদার অনি/এমএমএআর/জিকেএস