পরাজিত প্রার্থীর সমর্থককে কাপড় ছিঁড়ে মারধর
ভোটের আমেজ উপভোগ করতে ও ঘর মেরামতের কাজ করাতে চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়িতে এসেছেন চাকুরজীবী মোহম্মদ আলম। মঙ্গলবার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে গ্রামের কেন্দ্রে তার সমর্থিত প্রার্থী ভোটের ফলাফলে এগিয়ে থাকায় উল্লাস করেছিলেন তিনি। কিন্তু অবশেষে ওই প্রার্থী ভোটের সমষ্টিগতভাবে ফলাফলে হেরে যান।
পরদিন সকালে মোহম্মদ আলম বাড়ি থেকে নাস্তা করে স্থানীয় গঞ্জে যান ঘর নির্মাণের শ্রমিকের খোঁজে। এ সময় তাকে আটক করে বিজয়ী প্রার্থীর কয়েকজন কর্মী প্রশ্ন করেন গতকাল এভাবে উল্লাস কেন করেছেন। এই বলেই মারধর শুরু করেন এবং গায়ের জামা ছিঁড়ে নেন।
বুধবার (২২ মে) সকাল ১০টায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের বালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকার বালিয়া হাটে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার দিন দুপুরে ওই গ্রামে গেলে সাংবাদিকদের নির্যাতিত আলম এভাবেই ঘটনার বর্ণনা করেন।
আলম আরও বলেন, সকাল থেকে বিজয়ীদের থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে৷ আমি কিছু মনে করিনি৷ কারণ আমি গ্রামের ছেলে হলেও চাকরির সুবাদে বাইরে থাকায় এখানকার ভোটার না। আমার ভোট বাইরে। কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত না। নির্বাচনের দিন আমার পছন্দের প্রার্থীর জন্য শুভকামনা থেকেই আনন্দ করি। এর জন্য আমাকে এভাবে লাঞ্ছিত হতে হবে ভাবতেও পারিনি।
আলমের স্ত্রী বকুল আক্তার বলেন, আমি ঘটনাটা শোনার পর স্থানীয়দের নিয়ে বাজারে যাই৷ হামলাকারী বিজয়ী প্রার্থীর কর্মী মন্টুকে ভাই সম্বোধন করে জানতে চাই। তিনি আমার সঙ্গে অশ্লীল ভাষায় কথা বলেন। এতে আমার সঙ্গে থাকা অন্য নারীরা প্রতিবাদ করলে তিনি একটা ছুরি বের করে আমার সঙ্গে থাকা এক নারীর পেটে ঠেকিয়ে দেন। এমন অবস্থায় আমরা আতঙ্কিত হলে স্থানীয় বাজারের লোক তাকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেয়।
স্থানীয়রা এমন ঘটনাকে ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং সমাজের বিশৃঙ্খলা রোধে নতুন প্রজন্মের মানসিক চিন্তার উন্নয়নে সঠিক বিচারের দাবি করেন।
স্থানীয় এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ভোটে জয় পরাজয় থাকবে। ভোটের পরে এমন মারধরের ঘটনার দায় কে নেবে? তাই অতি উৎসাহী হয়ে নিজেদের গ্রামের শান্তি নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। আমরা চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। তিনি যেন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখেন। কারন ওই উশৃঙ্খল মানুষগুলো সার্বক্ষণিক চেয়ারম্যানের সঙ্গে ঘোরেন এবং যেখানে সেখানে চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতেও তার নাম ব্যবহার করে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেন।
স্থানীয় কলেজ ছাত্র রাব্বি বলেন, নির্বাচনে আমার পছন্দের প্রার্থী থাকতে পারেন। তিনি হেরে যেতেও পারেন৷ তাই বলে নির্বাচন শেষেও এমন আচরণ অবশ্যয় কাম্য নয়। এমন চিত্র আতঙ্কের। দোষীকে আইনের আওতায় না আনা গেলে তারা আরও বেপরোয়া হবে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ঠাকুরগাঁও সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক এসআই পিযুষ। তিনি বলেন, এ ঘটনায় তেমন কোনো বিষয় হয়নি। থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর স্থানীয় চেয়ারম্যান ও তার অভিভাবকরা থানায় এসে তাকে নিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে বেগুনবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. বনী আমিন বলেন, ঘটনা ঘটার পর আমি ওখানে গিয়েছি। পরে থানা থেকে ছেলেটাকে নিয়ে এসেছি।
তানভীর হাসান তানু/এফএ/এএসএম