কৃষাণী মায়ের মেয়ে জোষ্ঠি স্কুলের একমাত্র জিপিএ-৫ অর্জনকারী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাঙ্গামাটি
প্রকাশিত: ১২:৫৯ পিএম, ১৮ মে ২০২৪

পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির দুর্গম উপজেলা বাঘাইছড়ি। এই বাঘাইছড়ি উপজেলার খেদারমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে একমাত্র জিপিএ-৫ পেয়েছে জোষ্ঠি চাকমা।

জোষ্ঠি চাকমা ওই ইউনিয়নের দুর্গম উত্তর পাবলাখালী গ্রামের রায়ন চাকমা ও সঞ্চিতা চাকমার মেয়ে। কৃষাণী মায়ের আয়ে চলা পরিবারে তিন বোনের মধ্যে মেজ জোষ্ঠি।

জানা যায়, জোষ্ঠির বাবা রায়ন চাকমা ঢাকায় একটি কারখানায় চাকরি করতেন। তবে বেশ কয়েক বছর আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে আর ফিরে যেতে পারেননি কাজে। তাই সংসারের ভার এসে পড়ে মা সঞ্চিতা চাকমার ওপর।

তাদের ৪০ শতক কৃষিজমি থাকলেও রায়নের চিকিৎসা খরচ ও পরিবারের খরচ মেটাতে তা বন্ধক দিতে হয়। এমন অবস্থায় জোষ্ঠির মা চলতি মৌসুমে ৩০ শতক জমি বর্গা নিয়ে বোরো ধানচাষ করেছেন। চাষাবাদের আয় দিয়ে কোনো রকমে পরিবারের খরচ মেটে। পড়ালেখার পাশাপাশি জোষ্ঠি মায়ের কৃষিকাজে সহযোগিতা করে।

জোষ্ঠির বাবা রায়ন চাকমা বলেন, আমি খুবই অসুস্থ, কাজ করতে অক্ষম। আমার স্ত্রী কৃষিকাজ করে ঘরের খরচ ও মেয়েদের পড়ালেখা চালাচ্ছে। জোষ্ঠিও নিজে নিজে নাচ শিখে অনেক সময় কোনো অনুষ্ঠান হলে সেখানে যায়। সেখান থেকে কিছু টাকা পেলে তাই দিয়ে সে খাতা-কলম কিনে নিজের পড়ালেখার খরচ চালায়।

জোষ্ঠির মা সঞ্চিতা চাকমা বলেন, আমার তিন মেয়ে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে শ্রাবন্তী চাকমা খেদারমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। জোষ্ঠি আমার মেজ মেয়ে। সে এসএসসি পাস করায় আমি অনেক খুশি। আমি চাই আমার মেয়ে অনেক বড় কিছু হোক।

তিনি আরও বলেন, আমার একার পক্ষে তাকে পড়ালেখা করানো সম্ভব না। মেয়েকে কলেজে ভর্তি করানো এখনো অনিশ্চিত। তাই অন্যরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে আমার মেয়েকে আমি আরও পড়ালেখা করাতে পারবো।

জোষ্ঠি চাকমা জাগো নিউজকে জানায়, আমি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছি শুনে অনেক খুশি হয়েছি। আমার মা আমাকে এক্ষেত্রে অনেক সহযোগিতা করেছে। স্কুলের শিক্ষকরাও আমার পাশে ছিলেন সবসময়। আমি পড়ালেখার পাশাপাশি মাকে কৃষিকাজে সহযোগিতা করতাম। বাসায় নিজে নিজে নৃত্য শিখি, যার কারণে স্কুলে ও উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় নৃত্যের জন্য নিয়ে যায়। সেখান থেকে যা পাই তা দিয়ে পড়ালেখায় ব্যয় করি। আমি বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চাই। কিন্তু উচ্চ শিক্ষার খরচ মেটানো নিয়ে চিন্তিত।

খেদারমারা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুষারিপ চাকমা বলেন, আমার বিদ্যালয় থেকে এবছর ১৫৭ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তার মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী জোষ্ঠি চাকমা জিপিএ-৫ পেয়েছে। তার এই অর্জনে স্কুল ও ইউনিয়নবাসী সবাই খুশি। আমরা আশা করি সকলের সহযোগিতা পেলে জোষ্ঠি একদিন ভালো কিছু করতে পারবে।

সাইফুল উদ্দীন/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।