জীবনের কঠিন সময় পার করেছি: এমভি আবদুল্লাহর নাবিক নাজমুল
‘সোমালিয়ান দস্যুরা অস্ত্রের মুখে আমাদের জাহাজের একটি কেবিনে আটকে রাখে। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহাজের ইন্টারনেট সংযোগ। ছিনিয়ে নেওয়া হয় সঙ্গে থাকা মোবাইলফোন ও ডলার। তারা সবসময় আমাদের অস্ত্রের মুখে রেখেছিল। সবমিলিয়ে আমরা ২৩ জন নাবিক জীবনের এক কঠিন সময় পার করেছি।’
বুধবার (১৫ মে) সকালে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার ভদ্রঘাট ইউনিয়নের চরনুরনগর গ্রামে নিজ বাড়িতে ফিরে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নাবিক নাজমুল হক।
নাজমুল জলদস্যুদের কবলে পরা জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর এবি (অ্যাবল সি ম্যান) হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
নাজমুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত ১২ মার্চ আমাদের জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ান দস্যুরা। তবে আমাদের কোম্পানি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টা ছিল বলেই আজ আমরা বাড়িতে ফিরতে পেরেছি।’
বাড়ি ফেরার খবরে সকাল থেকেই নাজমুলের পরিবারে চলছে উৎসবের আমেজ। নাজমুলকে দেখেই জড়িয়ে ধরেন তার মা নার্গিস বেগম। আদর সোহাগ করে বরণ করে নেন বুকে।
নাজমুলকে দেখতে পেয়ে চোখের অশ্রু ধরে রাখতে পারেননি বাবা আবু সামা। সন্তানকে সুস্থ ফিরে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
সন্তান ফিরে পেয়ে বাবা আবু সামা জাগো নিউজকে বলেন, ‘জলদস্যুদের কাছ থেকে মুক্ত হয়ে ছেলে কবে বাড়িতে ফিরবে সেই প্রহর গুনছিলাম। সেই অপেক্ষা আজ শেষ হলো। ছেলে সুস্থভাবে বাড়িতে ফেরায় সরকারের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।’
গত ৪ মার্চ আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এমভি আবদুল্লাহ। ১২ মার্চ বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ জাহাজটি জিম্মি করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। দেশটির উপকূল থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ভারত মহাসাগরে জাহাজটি জিম্মি করা হয়।
এর ৩২ দিন পর গত ১৪ এপ্রিল জাহাজটি মুক্ত করে দেয় জলদস্যুরা। এরপরই সেটি সোমালিয়া উপকূল থেকে আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। টানা এক সপ্তাহের সমুদ্রযাত্রা শেষে ২১ এপ্রিল বিকেলে জাহাজটি আল হামরিয়াহ বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছায়।
জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত হয়ে ৫৫ হাজার মেট্রিক টন চুনাপাথর নিয়ে দেশে ফেরে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। সোমবার দুপুরে জাহাজটি দেশের জলসীমায় প্রবেশ করে এবং কুতুবদিয়ায় নোঙর করে।
মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে ফেরেন জাহাজটির নাবিকরা। বন্দরের এনসিটি-১ বার্থে পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা আবেগঘন পরিবেশে তাদের বরণ করে নেন। এসময় নাবিক ও স্বজনদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এম এ মালেক/এসআর/জেআইএম