সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস ঝুঁকিতে লোহালিয়া পাড়ের বনভূমি

আব্দুস সালাম আরিফ আব্দুস সালাম আরিফ , জেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ১১:১৫ এএম, ১৫ মে ২০২৪

পটুয়াখালী শহরের পূর্বপাশ দিয়ে বয়ে গেছে লোহালিয়া নদী। শত বছর আগে এই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে পটুয়াখালী শহর। তবে কালের বিবর্তনে নদী ছোট হয়েছে। আর নদীর পূর্ব পাড়ে (লোহালিয়া ইউনিয়ন অংশে) চর পড়ে প্রকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল এক বনভূমি। স্থানীয়দের কাছে এটি ছৌলা বাগান হিসেবেই পরিচিত।

প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এই বনভূমি থেকে অবাধে গাছ কেটে নেওয়া, নতুন গাছ সৃষ্টিতে বাধা প্রদানসহ কৃষিজমি দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেওয়ায় পায়তারা চলছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে না পারলে দখলদারদের কবলে পড়ে ধ্বংস হতে পারে প্রাকৃতিক এই বনভূমি।

স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৪ সালের পর থেকেই ধাপে ধাপে এই বাগানটি প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এক দশক আগে লোহালিয়া নদীর কাঠপট্টি এলাকায় নদীর প্রশস্ততা ছিল ৪২৫ মিটার। তবে বর্তমানে সেখানে নদীর প্রশস্ততা কমে হয়েছে ১৫৩ মিটার। বাকি ২৭২ মিটার এলাকায় চর পড়ে প্রাকৃতিক বনভূমি সৃষ্টি হয়েছে। একইভাবে লোহালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম ও দক্ষিণ পাশ ঘেঁষে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বনভূমিটি লোহালিয়া নদীর চরেই সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে পুরো এই ছৌলা বাগানের আয়তন ১.৬ বর্গ কিলোমিটার। আর প্রাকৃতিকভাবে এই বাগান সৃষ্টি হওয়ায় সরকারের এ বাবদ কোনো ব্যয়ও করতে হয়নি।

সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস ঝুঁকিতে লোহালিয়া পাড়ের বনভূমি

পটুয়াখালী সদর উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, লোহালিয়া নদীর চরে জেগে ওঠা বনভূমিটি মূলত সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত জমি। এটি ইদ্রাকপুর লোহালিয়া এবং কেশবপুর মৌজার মধ্যে পড়েছে। যার জে এল নং ৯২ এবং ৮৬।

এদিকে বেশ কয়েকটি অসমর্থিত সূত্র থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই চরের কিছু জমি সরকারের কাছ থেকে কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় বেশ কয়েকটি পক্ষ নদীর তীরে গড়ে ওঠা বনভূমির জমিকে কৃষিজমি দেখিয়ে বন্দোবস্ত নেওয়ার পায়তারা করছে।

সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস ঝুঁকিতে লোহালিয়া পাড়ের বনভূমি

সম্প্রতি এই ছৌলা বাগান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বনের অনেক স্থান থেকেই গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে এমন চিহ্ন রয়েছে। বিশেষ করে গাছের গোড়াগুলো এখনো স্পষ্ট। মূলত নির্দিষ্ট এলাকাকে কেন্দ্র করে গাছ কেটে সেখানে কৃষিজমি তৈরির প্রক্রিয়া চলছে। একইভাবে লোহালিয়া ব্রিজের দুই পাড়ে গড়ে তোলা হচ্ছে বসতবাড়িসহ কৃষিজমি। এ কারণে এই এলাকায় নতুন করে জন্ম নেওয়া ছৌলা গাছগুলো ছোট অবস্থাতেই কেটে ফেলা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, বনটি সম্পর্কে আমরা অবহিত আছি। এটি প্রকৃতির আশীর্বাদ, বিশেষ করে শহরের পাশে সাধারণত এমন বন দেখা যায় না। এটি শহরের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তবে বনভূমিটি বন বিভাগের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় আমরা এটিকে সংরক্ষণে কাজ করতে পারছি না। সরকারের পক্ষ থেকে এটিকে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা করলে বনবিভাগ এটি সংরক্ষণ এবং পরিচর্যায় কাজ করতে পারবে।

সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংস ঝুঁকিতে লোহালিয়া পাড়ের বনভূমি

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. নূর কুতুবুল আলম বলেন, বন থেকে গাছ কেটে নেওয়ার বিষয় আমার জানা নেই। কিংবা এ ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি। এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। কীভাবে বনটি সংরক্ষণ করা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করবো।

গত কয়েক বছর থেকেই জলবায়ু পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগ বৃদ্ধি পেয়েছে, পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে তীব্র দাবদাহের মতো বৈশ্বিক বিষয়গুলো। এমন পরিস্থিতি থেকে মুক্তির একমাত্র উপায় হিসেবে অধিক পরিমাণ বৃক্ষরোপণ আর সংরক্ষিত বনভূমির সংখ্যা বৃদ্ধিতেই সমাধানের পথ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। সেক্ষেত্রে পটুয়াখালীর এই ছৌলা বাগানটি সংরক্ষণের দাবি জেলাবাসীর।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।