এসএসসিতে জিপিএ-৪.৩৯ পেয়ে উত্তীর্ণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ঐতি রায়

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মোংলা (বাগেরহাট)
প্রকাশিত: ০৭:১৪ পিএম, ১৩ মে ২০২৪

জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন ঐতি রায় (১৮)। তারপরও দমে যাননি। লেখাপড়ার প্রতি ছিল তার প্রবল আগ্রহ। মা পড়ে শোনাতেন। আর সেটা মুখস্থ করতেন ঐতি রায়। এভাবেই পড়াশোনা চালিয়ে এসেছেন এসএসসি পর্যন্ত।

শ্রুতিলেখকের সহায়তায় পরীক্ষা দিয়ে এসএসসিতে জিপিএ-৪.৩৯ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন ঐতি রায়।

মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ঐতি রায়। পরীক্ষায় তার শ্রুতিলেখক ছিল একই এলাকার অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিজয়া হালদার।

এসএসসিতে জিপিএ-৪.৩৯ পেয়ে উত্তীর্ণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ঐতি রায়

সোমবার (১৩ মে) চিলা ইউনিয়নের হলদিবুনিয়া গ্রামের বালুর মোড় এলাকায় নিজ বাড়িতে কথা হয় ঐতি রায়ের বাবা অনুপম রায়ের সঙ্গে। আবেগাপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘জন্ম থেকে দৃষ্টিহীন মেয়ে এমন রেজাল্ট করবে ভাবিনি। তবে ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনার ব্যাপারে তার খুবই আগ্রহ ছিল। আমরা সেভাবেই তাকে স্কুলে ভর্তি করে পড়াশোনা করাই।’

একমাত্র মেয়েকে মা শংকরি রায় প্রথমে শ্রুতিলেখনির মাধ্যমে বাড়িতে পড়াশোনা শেখান। এভাবে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তার মেয়ে। পরীক্ষার হলে ঐতি রায় মুখস্থ বলতেন আর একই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী বিজয়া হালদার তা পরীক্ষার খাতায় লিখত। এভাবে তিনি সবগুলো পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি পাস করেছেন।

এসএসসিতে জিপিএ-৪.৩৯ পেয়ে উত্তীর্ণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ঐতি রায়

ঐতির রায়ের মা শংকরি রায় বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে ঐতির পড়াশোনার আগ্রহ দেখে তাকে স্কুলে নিয়ে যেতাম। ওর জীবনের স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা করবেই। এখন সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে। আমরা খুব খুশি। স্রষ্টার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।’

তবে ঐতি রায়ের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। তাই একমাত্র মেয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন তার বাবা-মা।

এসএসসিতে জিপিএ-৪.৩৯ পেয়ে উত্তীর্ণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ঐতি রায়

মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, ‘দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ঐতি রায়ের এমন প্রতিভা দেখে অবাক হয়েছি। মেধা না থাকলে এমন ফল করা কোনোভাবেই সম্ভব না। এখন ঐতির চোখের চিকিৎসা জরুরি। সে যাতে নিয়মিত পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে, সেজন্য উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ফলাফলের বিষয়ে ঐতি রায় বলেন, ‘জন্ম থেকে আমি দৃষ্টিহীন। কিন্তু পড়ালেখা করার খুব ইচ্ছে ছিল আমার। সে অদম্য ইচ্ছে থেকেই আমার এ সফলতা।’

এসএসসিতে জিপিএ-৪.৩৯ পেয়ে উত্তীর্ণ দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ঐতি রায়

তিনি বলেন, ‘পড়াশোনার কাজে আমার মা আমাকে সহযোগিতা না করলে আজ এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। মা পাশে বসে রিডিং পড়তো, আমি সেটা মুখস্থ করতাম। এভাবেই লেখাপড়া চালিয়ে এসেছি।’

ঐতি রায়ের স্কুল হলদিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ হালদার বলেন, ঐতির বাবা অনুপম রায় ও আমি ছোটবেলার বন্ধু। সে তার দৃষ্টিহীন মেয়েকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে যায়। আমি তাকে বলি, আমার স্কুলে দাও, বাকিটা আমি বুঝবো। এরপর ঐতি রায়কে খুব যত্ন করে ক্লাসে পড়াশোনা করাই। সে ক্লাসে অত্যন্ত মেধাবী ছিল। সে স্কুলের মর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছে।’

আবু হোসাইন সুমন/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।