ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন

চার বছরে লোকসান পৌনে ২ কোটি টাকা, লাভ করছে কুরিয়ার

সাখাওয়াত হোসেন
সাখাওয়াত হোসেন সাখাওয়াত হোসেন , জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৪:২৫ পিএম, ১২ মে ২০২৪

লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে আবারও ১০ জুন থেকে চালু হচ্ছে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। তবে গত চার বছরে ট্রেনটি আয়ের চেয়ে ব্যয় করেছে দ্বিগুণেরও বেশি। পরিসংখ্যান বলছে, লোকসানের পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত চার বছরে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন আয় করেছে ৪৬ লাখ ৩৯ হাজার ১৪০ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকা। লোকসান এক কোটি ৮২ হাজার ৮৬০ টাকা। অথচ রাজশাহী অঞ্চলের কুরিয়ার সার্ভিসগুলো আম পরিবহন করে এক বছরেই আয় করেছে অন্তত কোটি টাকা।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রতিবছরের মতো এবারও রহনপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী হয়ে ঢাকার উদ্দেশে আম নিয়ে ছুটবে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। আগামী ১০ জুন থেকে এই ট্রেন চলাচল শুরু হবে। ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেনের উদ্দেশ্য সড়কপথের যানবাহনের তুলনায় কম খরচে আম ও কৃষিজাত পণ্য পরিবহন করা। এতে চাষি, ব্যবসায়ী এমনকি লাভবান হবে রেলও। কিন্তু ফলাফল বলছে ভিন্ন কথা।

অনুসন্ধান বলছে, ২০২০ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন চলাচল করেছে ৪৭ দিন। আম পরিবহন করেছে ১১ লাখ ৯৯ হাজার ৫৯ কেজি। এতে আয় হয়েছে ১৩ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩৬ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ৫৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ২০২১ সালে ট্রেনটি চলাচল করেছে ৪৯ দিন। আম পরিবহন করেছে ২২ লাখ ৯৯ হাজার ৯২০ কেজি। এতে আয় হয়েছে ২৬ লাখ ৩০ হাজার ৯২৮ টাকা। ব্যয় হয়েছে ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ২০২২ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন আম পরিবহন করেছে এক লাখ ৭৮ হাজার ৭৭৮ কেজি। সেখানে আয় হয়েছে দুই লাখ ১২ হাজার ১৭৪ টাকা। ব্যয় ১২ লাখ ৪০ টাকা।

২০২৩ সালে ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন আম পরিবহন করেছে ১২ লাখ ৭ হাজার কেজি। এতে আয় হয়েছে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৫০২ টাকা। আর ব্যয় হয়েছে ১৯ লাখ ৬২ হাজার টাকা। অর্থাৎ গত চার বছরে ট্রেনটি আয় করেছে ৪৬ লাখ ৩৯ হাজার ১৪০ টাকা। আর ব্যয় এক কোটি ৪৭ লাখ ২২ হাজার টাকা। দিন শেষে রেলের লোকসান এক কোটি ৮২ হাজার ৮৬০ টাকা।

আরও পড়ুন

বাঘার আমচাষি ও রপ্তানিকারী সাদিয়া এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ট্রেনে এসি লাগেজে আম পাঠানো গেলে ভালো হয়। এতে আম ভালো থাকে। তবে রাজশাহী থেকে সরাসরি সিলেট ও চট্টগ্রামে আম পরিবহনের সুযোগ নেই। এ কারণে ট্রেনের চেয়ে কুরিয়ারেই আম পাঠানো আমাদের জন্য সুবিধাজনক।

নাচোলের আমচাষি রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘কুরিয়ারে আম বুকিং করলে ভোক্তা জানতে পারেন তাদের আমের অবস্থান কোথায়। কিন্তু ট্রেনে এই সুবিধা নেই। ট্রেনেও এসএমএস সিস্টেম চালু করলে চাষিরা ট্রেনে আম পাঠাতে আগ্রহী হবেন।’

চাঁপাই নবাবগঞ্জের আমচাষি ও ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বাগান থেকে সরাসরি ট্রাকে করে আম ঢাকায় যেখানে ইচ্ছে নিয়ে যাওয়া যায়। কিন্তু ট্রেনে আম নেওয়ার জন্য স্টেশনে আসতে হয়। সেখান থেকে আড়তে নিতে হয়। এতে পরিবহন খরচ বেশি পড়ে যায়। বিভিন্ন স্টেশনে রোদে ও বৃষ্টিতে আম যেনতেনভাবে ফেলে রাখা হয়। প্রতিটি স্টেশনে আম রাখার সুব্যবস্থা থাকলে ট্রেনে আম পরিবহনে আগ্রহ বাড়তে পারে।’

কথা হয় রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান রিংকুর সঙ্গে। তিনি বলেন, স্পেশাল ট্রেনে করে আম পরিবহন নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। তবে ব্যবসায়ীরা এটা থেকে তেমন সুফল পান না। কারণ এটি ডোর টু ডোর সার্ভিস দেয় না। আমাদের ডাক বিভাগের অনেক গাড়ি আছে। তাদের ডিজিটাল সিস্টেমও আছে। তারা যদি আন্তঃবিভাগীয় মিটিং করে আমগুলো ট্রেনে পরিবহনের পর আবার ডোর টু ডোর পরিবহণ করে, তবেই এটি লাভজনক হবে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীরাও এতে আগ্রহ দেখাবেন।

তবে সেবা বাড়াতে কুরিয়ার সার্ভিসের মতো নানা পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে জানান রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী।

তিনি বলেন, ‘আমরা সেগুলো ধীরে ধীরে করছি। আমাদের এসিভ্যান আছে। লাগেজ ভ্যান আছে। এগুলো আমরা প্রতিটি ট্রেনে ব্যবহার করবো। অন্তত কোনো কোম্পানির সঙ্গে মিলে ডোর টু ডোর সার্ভিস দিতে আমরা চেষ্টা করছি।

রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, কোনো কাজ শুরু করলে তাতে ত্রুটি থাকতেই পারে। সেটা কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়াই মূল লক্ষ্য।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন। তবে ট্রেনে আম পাঠানোর ক্ষেত্রে যেসব সমস্যার কথা এসেছে, তা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হবে। কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বসবো। তাদের সঙ্গে কোনো চুক্তিতে আসা যায় কি না, তা দেখা হবে।

এদিকে আম পরিবহনে ট্রেন যেখানে লোকসান গুনছে সেখানে প্রতিবছর লাভবান হচ্ছে কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো।

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিস রাজশাহী অঞ্চলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার অলতাফ হোসেন বলেন, রাজশাহী অঞ্চলে এবার আন্তত ১২০ কোটি টাকার পরিবহনযোগ্য আম রয়েছে। এসব আম বিভিন্ন পরিবহনে পাঠানো হবে। তবে রেলওয়ে আমাদের সঙ্গে কম্পিটিশনে আসতে পারে না। কারণ তারা ডিজিটাল নয়। তাদের একজনের আম অন্যজনের কাছে চলে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তিনি আরও বলেন, আমরা ডোর টু ডোর সার্ভিস দিই। এজন্য আমাদের চাহিদা বেশি। এবার অন্তত সাড়ে তিন কোটি টাকার আম পরিবহনের আশা করছেন তিনি।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।