সোনারগাঁয়ে লিচুর ফলনে বিপর্যয়, লোকসানের শঙ্কা

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৪:২৫ এএম, ১২ মে ২০২৪

লিচু চাষের জন্য নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের আবহাওয়া উপযোগী হওয়ায় সারাদেশে সোনারগাঁয়ের লিচুর কদরও বেশি। আবার সোনারগাঁয়ের লিচু সবসময় আগে পেকে যাওয়ায় এ উপজেলার লিচু সবার আগে বাজারে ওঠে। তবে এবার তীব্র খরা আর শিলাবৃষ্টির কারণে লিচুর ফলনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। এর ফলে বাগানমালিকরা এবার লোকসানের আশঙ্কা করছেন।

শনিবার (১১ মে) উপজেলার বিভিন্ন লিচু বাগান ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা যায়।

সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, পানাম, নোয়াইল, হারিয়া, বারদী, সেনপাড়া দত্তপাড়া, বাগমুছা, অর্জুন্দী, হাতকোপা, দরপত, ছাপেরবন্ধ, গোয়ালদী, টিপরদী, হরিষপুর, ভট্টপুর, সোনারগাঁ পৌরসভা, বৈদ্যেরবাজার, মোগড়াপাড়া, সনমান্দি, সাদিপুর ইউনিয়নের খাসনগর, চিলারবাগ, দৈলরবাগ, লোকশিল্প জাদুঘর, গোবিন্দপুর, গাবতলী, বালুয়া দিঘীরপাড় এলাকায় দুই শতাধিক লিচুবাগান আছে।

এসব বাগানে কদমী, চায়না-৩, মোজাফফরপুরী, এলাচি, পাতি জাতের লিচু বেশি চাষ হয়েছে। তবে সোনারগাঁয়ে কদমি লিচু বেশি চাষ হয়। বর্তমানে লিচুচাষিরা তাদের লিচুবাগানে ব্যস্ত সময় পার করেছেন। অনেকেই লিচুবাগান পাহারা দিচ্ছেন। অনেকেই আবার বাজারে লিচু বিক্রির জন্য টুকরি, বাঁশ, রশিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম সংগ্রহ করছেন। পাইকাররাও বাগানগুলোতে আসছেন লিচু কিনতে। তবে ভালো দাম না পাওয়ায় খুশি নন বাগানমালিকরা।

jagonews24.com

৪০ বছর ধরে লিচু ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সোনারগাঁয়ের তাইজুল ইসলাম। এখানে রয়েছে তার ৭টি বাগান। জাগো নিউজকে তাইজুল বলেন, অন্যবছরের তুলনায় এ বছর ফলন খুবই খারাপ। এবার খরার কারণে অধিকাংশ লিচু ঝরে গেছে। আবার যেসব লিচু টিকে আছে তা আকারে ছোট। লিচুতে পোকামাকড় বেড়ে গেছে।

তিনি বলেন, গতবার আমার বাগান থেকে যে লিচু পেয়েছিলাম এবার তার চারভাগের একভাগ পেয়েছি। আবার গতবার আমরা লিচুর দামও ভালো পেয়েছিলাম। বর্তমান প্রতি হাজার লিচু ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। অথচ গতবার প্রতি হাজার লিচু ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। বর্তমানে সোনারগাঁয়ের আবহাওয়ার যে পরিবর্তন ঘটছে এর ফলে লিচু ব্যবসার ভবিষ্যত অন্ধকার দেখছি। আগামীতে আর লিচু বাগান রাখবো কি না তা নিয়ে দ্বিধায় রয়েছি।

আরেক লিচুবাগানের মালিক কামরুল হাসান শিমুল বলেন, আমার এই বাগানে ৫৭টি গাছ আছে। এবার ভালোই মুকুল হয়েছিল, কিন্তু খরা আর শিলাবৃষ্টির কারণে লিচু ঝরে যায়। এ বছর লিচুতে পোকামাকড় বেশি আক্রমণ করেছে। আমার বাগানে শুধু কদমি লিচু আছে। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা-ব্যবসায়ীরা এখান থেকে পাইকারি দামে লিচু কিনে নিয়ে যান। যে লিচু আকারে বড় তা প্রতি হাজার ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট আকারের লিচু ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করছি। গতবার লিচু বিক্রি করে ভালো লাভ হলেও এবার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে।

সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আফরোজা সুলতানা বলেন, সোনারগাঁয়ের লিচু সারাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়। কিন্তু এবার বিভিন্ন কারণে লিচু আকৃতিতে তেমন বড় হয়নি। এর ফলে চাষি ভালো দাম পাচ্ছেন না। তাই অনেক বাগানমালিককেই এবার লোকসান গুনতে হতে পারে।

রাশেদুল ইসলাম রাজু/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।