মেহেরপুরের বাজারে অপরিপক্ব লিচু, দামও চড়া
দীর্ঘদিনের তাপপ্রবাহের কারণে অনেক দেরিতে পাকতে শুরু করেছে লিচু। সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় এবছর লিচুর শাঁস ও স্বাদ কম। লিচু পাকতেও সময় লাগছে বেশি। তবুও লাভের আশায় অপরিপক্ব লিচু বিক্রি শুরু করেছেন ব্যবসায়ী ও বাগানমালিকরা।
কৃষকরা বলছেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে পরিপক্ব হওয়ার আগেই গাছ থেকে লিচু পেড়ে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। গাছ থেকেও লিচু ঝরে পড়ছে। ফেটে যাচ্ছে। এজন্য লিচু বিক্রি করে দিচ্ছেন তারা।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, জেলায় ৭১৫ হেক্টর জমিতে লিচুর বাগান রয়েছে। শুরুতে ৬৫ শতাংশ গাছে মুকুল এসেছিল। এসব বাগানে আঁটি লিচু, মোজাফ্ফর বোম্বাই, চিলি বোম্বাই, আতা বোম্বাই ও চায়না-থ্রি জাতের লিচু উৎপাদন হয়ে থাকে। লাভজনক হওয়ায় এ জেলায় লিচুর আবাদ দিন দিন বাড়ছে।
মেহেরপুর শহরের বাসস্ট্যান্ড পাড়ার লিচুচাষি আশকার আলী জাগো নিউজকে জানান, এবছর ২৫ বিঘা জমিতে লিচুগাছের পরিচর্যা করেছেন। তার বাগানে আঁটি লিচুর পাশাপাশি কলম লিচু, বোম্বাই, চায়না-থ্রি জাতের লিচু রয়েছে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে লিচু কাঙ্ক্ষিত আকারের চেয়ে কিছুটা ছোট হয়েছে।গতবছরে যে গাছে ১৭ কাউন্ট (৮০টি লিচুতে হয় এক পণ, আর ১০০ পণে এক কাউন্ট) লিচু ছিল, এবার সেখানে ১০ কাউন্ট লিচু হয়েছে। তবে লিচুর বাজারদর ভালো।
আরও পড়ুন:
রাজশাহীর বাজারে উঠেছে লিচু, দাম চড়া
একটি লিচু বাগানের মালিক রুস্তম আলী। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবছর লিচুর ভালো ফলন হয়নি। গতবছর লিচুচাষে কৃষকরা ভালো লাভবান হয়েছিলেন। এবার তীব্র গরম পড়ায় লোকসান হবে। তবে আগামী এক সপ্তাহ বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন না হলে কাঙ্ক্ষিত ফলনের পাশাপাশি কিছুটা লোকসান কাটিয়ে ওঠা যাবে।
মিজানুর রহমান নামের আরেকজন বলেন, ‘চলতি মৌসুমে একটু দেরি করেই গাছে মুকুল এসেছিল, তাও আবার অনেক কম। এর ওপর প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে গাছ থেকে ঝরে গেছে অনেক লিচু। এতে লোকসান গুনতে হবে চাষিদের।’
গাংনী বাজারে রাস্তার পাশে সারিবদ্ধভাবে লিচুর বাজার বসিয়ে বিক্রি করতে দেখা যায় বিক্রেতাদের। ৮০টি লিচু ২৪০-২৬০ টাকায় বিক্রি করছিলেন তারা। লিচু বিক্রেতা রবিউল ইসলাম ও নাসির উদ্দিন জাগো নিউজকে জানান, লিচুর মুকুল আসার সঙ্গে সঙ্গে তারা পাইকারি দরে বাগান কিনে রেখেছিলেন। অতিরিক্ত রোদের তাপ আর অনাবৃষ্টির কারণে এবার লিচুর রং হয়নি। শাঁস এবং স্বাদও কম। বোঁটা শুকিয়ে লিচু ঝরে পড়ছে। খোসা ফেটে নষ্ট হচ্ছে। যে কারণে অপরিপক্ব হলেও বিক্রি করতে হচ্ছে। তা নাহলে মোটা অংকের লোকসান গুনতে হবে।
লিচু ব্যবসায়ী মকলেচুর রহমান বলেন, ‘প্রতি পন (৮০টি) হিসেবে লিচু বিক্রি করছি ২৫০ টাকা দরে। লিচুর রং না হলেও পেকে গেছে। এর চেয়ে বেশি পাকাতে গেলে আমরা পথে বসে যাবো। লিচুর গুটি দেখেই সব টাকা পরিশোধ করে বাগান কিনতে হয়েছে।’
লিচু্র ক্রেতা সাইদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাজারে নতুন ফল এসেছে। তাই বাড়ির সদস্যদের বায়না মেটাতে কিনতে হচ্ছে। যদিও লিচুর কালার ও একটু স্বাদ কম। আরও কিছুদিন গাছে থাকলে লিচু পুষ্ট হতো, স্বাদও পাওয়া যেতো।’
আরেক ক্রেতা শাহনাজ বেগম বলেন, ‘নতুন বছরের নতুন ফল। তাই কিনলাম। তবে এবছর লিচুর মিষ্টতা ও স্বাদ কম। দামও অনেক বেশি। ৮০টি লিচুর দাম হাঁকা হচ্ছে ২৫০-২৬০ টাকা পর্যন্ত।’
লিচুচাষি আহসান আলী জানান, তার বাগানে ৫০টি গাছ থাকলেও ফল এসেছে অর্ধেক গাছে। গতবছরের তুলনায় ফলন কম। তাপে গাছ থেকে লিচু ঝরে পড়ছে। গাছের গোড়াই পানি দিয়েও তেমন একটা ফল পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যেগুলো গাছে আছে, তা আকারে ছোট। যে কারণে এবার বাগানে যা লিচু পাওয়া যাবে তা তিন ভাগের এক ভাগ।
তবে অপরিপক্ক লিচু বাজারজাত করলে সংশ্লিষ্টদের বিষয়ে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিজয় কৃষ্ণ হালদার।
তিনি বলেন, লিচুর গুণগত মান ধরে রাখতে আরও কয়েক দিন পর লিচু বাজারজাত করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের। শিলাবৃষ্টি ও ঝড় ছাড়া বর্তমানে যে আবহাওয়া বিরাজ করছে তা লিচুর জন্য উপযোগী। অপরিপক্ব লিচু খেলে ভোক্তারা লিচুর স্বাদ ও পুষ্টিমান পাবেন না।
আসিফ ইকবাল/এসআর/জেআইএম