রশিদ উদ্দিনের লেখা গান অন্যের নামে প্রচার, প্রতিবাদ সংস্কৃতিজনদের

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নেত্রকোনা
প্রকাশিত: ০৬:১৮ পিএম, ০৭ মে ২০২৪

উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাউল কবি সাধক রশিদ উদ্দিনের লেখা একটি গান অন্যের নামে চালিয়ে দেওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছে নেত্রকোনার বিভিন্ন বাউলসহ সাংস্কৃতিক সংগঠন। তাদের দাবি গানটি রশিদ উদ্দিনের লেখা। এ সমন্ধীয় একটি পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেছে। কিন্তু গানটি সম্প্রতি কোক স্টুডিও আরেক বাউল কবি আবদুল খালেক দেওয়ানের নামে প্রচার করেছে।

বিষয়টির প্রতিবাদে সোমবার (৬ মে) নেত্রকোনা জেলা প্রেস ক্লাবের সামনে সামাজিক-সাংস্কৃতিক-সাহিত্য সংগঠনসমূহ ও সম্মিলিত নাগরিক সমাজের ব্যানারে প্রতিবাদ সমাবেশ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করা হয়। এতে একজনের লেখা গান অন্যের নামে প্রচারের অভিযোগ আনা হয় কোক স্টুডিও বাংলার বিরুদ্ধে।

নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ এমরানের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বক্তারা এ বিষয়টির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

রশিদ উদ্দিনের লেখা গান অন্যের নামে প্রচার, প্রতিবাদ সংস্কৃতিজনদের

এসময় নেত্রকোনা-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাংস্কৃতিককর্মী ছবি বিশ্বাস, নেত্রকোনা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কবি সরোজ মোস্তফা, রাজুর বাজার কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ ও বাউল রশিদ উদ্দিনের প্রথম জীবনীগ্রন্থ ‘রশিদ গীতিকা’ এর লেখক গোলাম মোস্তফা, রশিদ উদ্দিনের ছোট ছেলে আবু আনছার ওরফে কালা মিয়া, প্রবীণ সাংবাদিক শ্যামলেন্দু পাল, শিকড় উন্নয়ন কর্মসূচির সভাপতি আ খ ম রফিকুল ইসলাম, জেলা উদীচীর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অর্পিতা খানম ও বাউল শিল্পী আনিসুর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সাবেক এমপি ছবি বিশ্বাস বলেন, ‘মাগো মা ঝিগো ঝি’ গানটি নেত্রকোনার বাউল কবি রশিদ উদ্দিনের সৃষ্টি। তিনি ভাটি বাংলার মালজোড়া গানের স্রষ্টা। হাওরঘেরা এ জনপদের মাটি থেকে উঠে এসেছে গানটি। দুটি শব্দ এদিক-ওদিক করে গানটি খালেক দেওয়ানের নামে চালিয়ে দেওয়া অনৈতিক।

অধ্যক্ষ গোলাম মোস্তফা বলেন, বাউল রশিদ উদ্দিন এ অঞ্চলের সন্তান। ‘মাগো মা, ঝিগো ঝি’ গানটি তার পাণ্ডলিপিতে রয়েছে। প্রয়াত বাউল শিল্পী বারী সিদ্দিকী এ গানটির ক্যাসেট বের করেছেন এবং তিনি টেলিভিশনে অনেকবার গানটি রশিদ উদ্দিনের লেখা উল্লেখ করে গেয়েছেন। কাজেই রশিদ উদ্দিনের গান নিয়ে অনর্থক বিতর্ক তৈরি না করতে কোক স্টুডিওকে অনুরোধ করছি।

রশিদ উদ্দিনের লেখা গান অন্যের নামে প্রচার, প্রতিবাদ সংস্কৃতিজনদের

লোক গবেষক ও কবি সরোজ মোস্তফা বলেন, রশিদ উদ্দিনের এ গানকে অন্যের নামে চালানোর অপচেষ্টা হচ্ছে। অথচ এ গানের ভাব, ভাষা ও সংস্কৃতির সর্বাংশে আছে হাওরাঞ্চল। গানটির সর্বাংশে পূর্ব ময়মনসিংহের জলজ জীবনের ভাব ও ভাবুকতা। প্রায় ১০০ বছর ধরে লোক পরম্পরায় এ গান রশিদ উদ্দিনের নামে চলেছে। তার সংকলনগুলোতেও এ গান আছে।

তিনি বলেন, অন্তত চার-পাঁচ প্রজন্মের মুখে মুখে প্রচলিত ও প্রচারিত এই গান। গানের ভেতরে যে গোমাই নদীর কথা আছে সেটিও নেত্রকোনোর কলমাকান্দার পথে গুতুরা বাজারের কাছ দিয়ে বহমান। ‘নয়া পানি’ শব্দটি এই হাওরাঞ্চল ছাড়া আর কারা ব্যবহার করেন? ‘অইলাম বুড়া’, ‘গলই’, ‘গোড়া’ (জোড়া গলই গোড়া) শব্দগুলো ভাটিবাংলা ছাড়া আর কোথায় পাবেন? সম্বোধনে নারী-পুরুষের গার্হস্থ্য জীবনে ‘গো’ শব্দের ব্যবহার আছে। এখন ‘গো’-এর মধ্যে ‘লো’ শব্দ লাগাইয়া দিলেই কি গানের ভাব আর দার্শনিকতা পাল্টে যাবে?

রশিদ উদ্দিনের ছোট ছেলে আবু আনছার ওরফে কালা মিয়া বলেন, ছোটকাল থেকেই দেখছি গানটি আমার বাবার নামে বিভিন্ন শিল্পীরা গাইছেন। গানটির বুকে কী করে ছুরি চালানো হলো! কী করে একজনের গান অন্যের নামে চালানো হলো! এটা অপরাধ বলে মনে করি। আমরা দ্রুত এ বিষয়টির সমাধান চাই।

রশিদ উদ্দিনের লেখা গান অন্যের নামে প্রচার, প্রতিবাদ সংস্কৃতিজনদের

সভাপতির বক্তব্যে সাইফুল্লাহ এমরান বলেন, আমাদের কাছে রশিদ উদ্দিনের এ গানের পাণ্ডুলিপিসহ অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। ছোটবেলা থেকে গানটি রশিদ উদ্দিনের বলে শুনে বড় হয়েছি। এ গান কোনোভাবেই খালেক দেওয়ানের হতে পারে না। সামান্য দু-একটি শব্দ বা পঙক্তি এদিক-ওদিক করে একজনের গানকে অন্যের নামে চালিয়ে দেওয়া যায় না। এটি অন্যায়।

মালজোড়া গানের অমর স্রষ্টা বাউল কবি রশিদ উদ্দিনের জন্ম ১৮৮৯ সালে নেত্রকোনায়। তার লেখা উল্লেখযোগ্য গানগুলোর মধ্যে ‘মানুষ একটা কলের গাড়ি’, ‘মানুষ ধর মানুষ ভজ’, ‘এই যে দুনিয়া কীসেরও লাগিয়া’, ‘সোঁয়াচান পাখি’ অন্যতম। ‘মানুষ ধর মানুষ ভজ/ শুন বলি রে পাগল মন’ গানের জন্য ১৯৯৯ সালে শ্রেষ্ঠ গীতিকার (মরণোত্তর) হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এই বাউল সাধক।

এইচ এম কামাল/এএইচ/এমকেআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।