মিরসরাই

কালবৈশাখীতে লন্ডভন্ড ঘরবাড়ি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি মিরসরাই (চট্টগ্রাম)
প্রকাশিত: ০৭:১৮ পিএম, ০৬ মে ২০২৪

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে কালবৈশাখী ঝড়ের তাণ্ডবে ফসল, ঘরবাড়ি, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও তারের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সোমবার (৬ মে) দুপুর থেকে শুরু হওয়া ঝড় প্রায় দেড়ঘণ্টা তাণ্ডব চালায়।

ঝড়ে অনেক জায়গায় ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। উড়ে গেছে বসতঘরের টিনের চাল। উপড়ে পড়েছে বড় বড় গাছ। বড় বড় গাছ পড়ে বন্ধ আঞ্চলিক সড়কে যানচলাচল। বোরো ধান, আম ও কাঁঠালের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গাছ পড়ে উপজেলা ভূমি অফিসের একটি ভবন ভেঙে গেছে।

বারইয়ারহাট পৌর এলাকায় ঝড়ে টিন উড়ে এসে পড়ে আমলমগীর নামের এক অটোরিকশাচালক গুরুতর আহত হয়েছেন। স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে উপজেলার বেশ কয়েকটি স্কুলের অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

মিরসরাই/কালবৈশাখীতে লন্ডভন্ড ঘরবাড়ি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

উপজেলার মিঠাছড়া এলাকায় লাইনে বজ্রপাত হয়ে তিন ইঞ্চি পাইপ ফেটে যাওয়ায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উপজেলায় বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কালবৈশাখী ঝড়ে বারইয়ারহাট পৌরসভা, মিরসরাই পৌরসভা, মিরসরাই সদর ইউনিয়ন, মিঠানালা, ওয়াহেদপুর, দুর্গাপুর, খৈয়াছড়া, কাটাছড়া ও ইছাখালী ইউনিয়নে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে গাছপালা উপড়ে গেছে। অনেক জায়গায় গাছ পড়ে ভেঙে গেছে ঘরবাড়ি।

কাটাছড়া ইউনিয়নের কৃষক মুসলিম উদ্দিন বলেন, ‘ঝড়ে আমার ক্ষেতের এক হাজার ২৫০ পিস সাম্মাম গাছ মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। অনেক গাছে ফলনও এসেছিল। আমার লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেলো।’

মিরসরাই/কালবৈশাখীতে লন্ডভন্ড ঘরবাড়ি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

আবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি নুরুল আবছার বলেন, স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঝড়ের কবলে পড়ে অন্তত ২০ শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের বাড়িতে পাঠানো হয়।

মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক তন্ময় জামশেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে চলে গেছে।

উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাশেম বলেন, ঝড়ে আমার এলাকার অনেক জায়গায় গাছপালা ভেঙে পড়ে ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে। সড়কে গাছ পড়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগ।

চট্টগ্রাম পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩ এর মিরসরাই জোনাল অফিসের ডিজিএম আদনান আহমেদ বলেন, কালবৈশাখী ঝড়ে গাছপালা ভেঙে বিদ্যুতের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের অফিসের আওতাধীন প্রায় ৩০টি খুঁটি ভেঙে গেছে। অসংখ্য জায়গায় গাছপালা উপড়ে পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। উপজেলার আরও বিভিন্ন এলাকায় আরও অর্ধশত বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে যেতে পারে।

মিরসরাই/কালবৈশাখীতে লন্ডভন্ড ঘরবাড়ি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন

তিনি বলেন, আমাদের কর্মীরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন। কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ চন্দ্র রায় বলেন, মিরসরাইয়ে এবার প্রায় ১৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। কালবৈশাখীতে অনেক জায়গায় বোরো ধান জমিনে শুয়ে গেছে। কিছু কিছু জায়গায় পানি জমে গেছে। তবে বৃষ্টি আর না হলে তেমন ক্ষতি হবে না।

কালবৈশাখীতে উপজেলাজুড়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জানিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহফুজা জেরিন বলেন, এখনো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যায়নি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে।

তিনি আরও বলেন, মিঠাছরা এলাকায় লাইনে বজ্রপাত হয়ে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে কর্মীরা এসে লাইন মেরামতের কাজ করছেন।

এম মাঈন উদ্দিন/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।