বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় কিশোরীর আত্মহত্যা
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের ডুগডুগি গ্রামে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে ১৫ বছরের এক কিশোরী। তার বাল্যবিয়ের আয়োজন করায় বিয়ের দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত কনের বাবাকে জরিমানা করেন। বিয়ে বাড়ির বরযাত্রীর খাবার যায় স্থানীয় এতিমখানায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ঘটনা ঘটে। কিন্তু শনিবার (৪ মে) দুপুরে মেয়েটি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। পরিবারের লোকজন মেয়েকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসকমৃত ঘোষণা করেন।
নিহত সুইটি দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে ও লোকনাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। চার ভাই-বোনের মধ্যে সুইটি ছিল সবার ছোট।
রোববার (৪ মে) দুপুরে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ফারহানা পলাশ।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ের অঞ্জনা খাতুন সুইটির (১৫) সঙ্গে একই উপজেলার লোকনাথপুর গ্রামের মোসাদ্দেক আলীর ছেলে সমির আলীর বিয়ে ঠিক হয়। কিন্তু বাঁধ সাধে আইন। বাল্যবিয়ের খবর পেয়ে দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সজল কুমার দাস ঘটনাস্থলে পৌঁছে সেটি বন্ধ করেন। এ সময় মেয়ের বয়স না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেওয়া যাবে না মর্মে মেয়ের বাবার কাছ থেকে মুচলেকা নেন। তবে ছেলের পরিবার আবারো বিয়ের জন্য চাপাচাপি করতে থাকে মেয়ের পরিবারকে। এরই এক পর্যায়ে উভয় পরিবারের সম্মতিতে আবারো চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার একটি গ্রামে মেয়ের বোনের বাড়িতে গোপনে বিয়ের আয়োজন করা হয়। তবে এবার ছেলেপক্ষ হঠাৎ বিয়ে ভেঙে দিলে বিষপান করে সুইটি।
সুইটির বাবা আমির হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার একই উপজেলার হাউলী ইউনিয়নের লোকনাথপুর গ্রামে মোচ্ছাদেকের ছেলে সমিরের সঙ্গে আমার মেয়ের বিয়ের কথা ছিল। কিন্তু বাল্যবিয়ের আয়োজনের অপরাধে আমাকে আট হাজার টাকা জরিমানা হয়। সিদ্ধান্ত নিলাম, জরিমানা যখন হয়েছে তখন আমি আর মেয়ে বিয়ে দেব না। কিন্তু ছেলে পক্ষ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং বলে যেভাবেই হোক এই বিয়ে হবে। ছেলে পক্ষের লোকজন আমার মেয়েকে তাদের বাড়ি নিয়ে যায় এবং মেয়েকে তারা আবার বিয়েতে রাজি করে। পরে আমি মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রাজি হই। তারপর শনিবার আলমডাঙ্গায় আমার মেজো মেয়ের বাড়িতে গোপনে বিয়ের আয়োজন করা হয়। অতিথিদের জন্য রান্নাবান্নার আয়োজনও সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু বিয়ে করতে যাওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে ছেলে এবং ছেলে পক্ষ বলে এ বিয়ে হবে না। এরপর ঘটে দুর্ঘটনা। আমার মেয়ে বিষপান করে।
তিনি আরও বলেন, ওই ছেলের সঙ্গে আমার মেয়ের সম্পর্ক ছিল। তাই তার ওপর অভিমান করেই আমার মেয়ে বিষ খেয়েছে। কৃষি জমিতে দেওয়ার জন্য আমার ঘরে থাকা কিটনাশক খেয়ে আমার মেয়ে আত্মহত্যা করে। আমি ছেলে পক্ষের নামে মামলা করবো। আমি এর বিচার চাই।
এ বিষয়ে পাত্র সৌমিকের মা জহুরা বেগম বলেন, বিয়ে ভেঙে দেওয়ার পর ওই মেয়ের পরিবার থেকে আবারো বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। গত শনিবার তারা আমার ছেলেকে বিয়ের জন্য ওই মেয়ের বোনের বাড়ি আলমডাঙ্গায় যেতে বলেন। আমার ছেলে বলে, তার বাবা বাড়ি নেই, বাবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেবে। এ নিয়ে ওই মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের ফোনে কথা কাটাকাটি হয়। পরে শুনছি ওই মেয়ে বিষপান করেছে।
দামুড়হুদা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর কবির বলেন, ছেলে-মেয়ে দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিন দিন আগে ভ্রাম্যমাণ আদালত বাল্যবিয়ে বন্ধ করে কিশোরীর বাবাকে জরিমানা করেন। বিয়ে করতে পারেনি বলে আত্মহত্যা করেছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। এ ঘটনায় চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) নীতিশ বিশ্বাস বলেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। বকাঝকার কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে মেয়েটি। তবে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।
হুসাইন মালিক/এফএ/এএসএম