মোংলা-খুলনা রুটে চলতি মাসেই ট্রেন চলাচল
উদ্বোধন হয়েছে গতবছরের নভেম্বরে। তবে স্থায়ী জনবল নিয়োগসহ নানা জটিলতায় চালু হয়নি মোংলা-খুলনা রুটে ট্রেন চলাচল। কবে নাগাদ চালু হবে তা নিয়েও ছিল ধোঁয়াশা। তবে সব সমস্যার সমাধান ও জটিলতা অবসানসহ আপাতত অস্থায়ী জনবল দিয়ে চলতি মাসেই যেকোনো সময়ে মোংলা-খুলনা রেলপথে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
এরইমধ্যে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে খুলনা থেকে মোংলা রেলপথের চূড়ান্ত পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চূড়ান্ত পরীক্ষা সম্পন্নের সময় উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) ও প্রকল্প পরিচালক আরিফুজ্জামান, মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) এ এম সালাহউদ্দীন, প্রধান যান্ত্রিক প্রজেক্ট (পশ্চিম) মুহাম্মদ কুতরত-ই-খুদা, প্রধান বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী (পশ্চিম) মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, প্রধান সংকেত ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলী (টেলিকম, পশ্চিম) সৈয়দ মো. শহিদুজ্জামান, পশ্চিমাঞ্চলের (পাকশী) বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ বীর বল মন্ডল ও নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম।
প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, রেললাইনে বিভিন্ন ধাপের ফিনিশিংয়ের কাজ বাকি ছিল, সেটি সম্পন্ন করা হয়েছে। চূড়ান্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষাও শেষ। বাণিজ্যিকভাবে রেল চালুর জন্য খুলনা-মোংলা রুট পুরোপুরি উপযোগী করে দেওয়া হয়েছে।
স্থায়ী জনবল নিয়োগের বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আটকে থাকায় অস্থায়ী জনবল দিয়ে আপাতত রেল চালানোর জন্য রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের (পাকশী) কাছে সবকিছু বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানান তিনি।
খুলনা-মোংলা রেলপথ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, লাইন চালুতে দরকার প্রয়োজনীয় জনবল। এ রুটে আটটি স্টেশন ও লাইন ক্লিয়ারিংয়ে ৫৭৬ জন জনবলের অর্গানোগ্রাম করা হয়েছে। সেটিও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তবে আপাতত অস্থায়ী জনবল নিয়োগ দিয়ে রেল চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
নির্দিষ্ট তারিখ উল্লেখ না করে চলতি মাসেরই যেকোনো দিন রেল চালুর বিষয়টি মাথায় রেখে স্টেশনের আসবাবপত্র, রেলস্টেশন ও রেলক্রসিংগুলোতে অস্থায়ী জনবল নিযুক্ত, রুটে চলাচলকারী রেলের সময়সূচি, ভাড়া ও শিডিউল চূড়ান্ত করা হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করে খুলনা-মোংলা রুটে চলতি মাসেই বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চালানো হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ (ভারপ্রাপ্ত) বীর বল মন্ডল।
প্রকল্প কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২১ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটির অনুমোদন দেওয়া হয়। জমি অধিগ্রহণ, রেললাইন, রেলসেতু নির্মাণসহ পুরো প্রকল্পের ব্যয় তখন ধরা হয়েছিল এক হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এরপর ২০১৫ সালে সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় তিন হাজার ৮০১ কোটি ৬১লাখ টাকা। এরপর ২০২১ সালে ফের সময় ও ব্যয় বাড়ে। তখন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকা। সবশেষ ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। সেই মেয়াদ ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত করা হয়।
অন্যদিকে প্রকল্পের কাজ রূপসা নদীর ওপর ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রেলসেতু, ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হলেও স্টেশনগুলোর ডাবল লাইন হিসাব করে ৯১ কিলোমিটার রেলপথ, ৯টি প্ল্যাটফর্ম এবং ১০৭টি ছোট সেতু ও ৯টি আন্ডারপাস নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সেইসঙ্গে সিগন্যালিং ও টেলিকমিউনিকেশনের কাজও শেষ করা হয়।
২০২৩ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যৌথভাবে ভার্চুয়ালি খুলনা-মোংলা রেললাইন প্রকল্প উদ্বোধন করেন। এরআগে ৩০ অক্টোবর ফুলতলা থেকে মোংলা পর্যন্ত পরীক্ষামূলকভাবে রেল চালানো হয়।
ট্রেন চলাচল শুরু হলে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হবে। ব্যবসায়ীরা মোংলা বন্দর দিয়ে দ্রুত ও কম খরচে মালামাল পরিবহন করতে পারবেন। মোংলার সঙ্গে রেলপথে যাতায়াত সুবিধার পাশাপাশি আরও গতিশীল হবে মোংলা বন্দর। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। সুন্দরবনকেন্দ্রিক পর্যটন বিকাশে আরও সহায়ক হবে এ রেলপথ।
এসআর/জেআইএম