শরীয়তপুর

চলতি বছরে বন বিভাগ কেটেছে ১৭০০ গাছ, বেড়েছে দাবদাহ

বিধান মজুমদার
বিধান মজুমদার বিধান মজুমদার , জেলা প্রতিনিধি, শরীয়তপুর
প্রকাশিত: ০৪:৪৭ পিএম, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

সারাদেশে বইছে তীব্র দাবদাহ। প্রখর রোদ আর ভ্যাপসা গরমে এখন টিকে থাকাই দায়। প্রাকৃতিক এ দুর্যোগের কারণ হিসেবে গাছ কাটাকে দায়ী করছেন কেউ কেউ। অথচ শরীয়তপুরে উন্নয়নের নামে প্রায় বৃক্ষশূন্য করে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা।

শুধু চলতি অর্থবছরেই জেলার ১৯ কিলোমিটার সড়কে প্রায় ১৭০০ গাছ অপরিকল্পিতভাবে কেটে ফেলার অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের বিরুদ্ধে। এতে জেলার দাবদাহ আরও বেড়েছে।

স্থানীয় ও বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি অর্থবছরে জেলার ছয়টি উপজেলায় ১৯ কিলোমিটার সড়কের পাশে দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতাধীন প্রায় ১৭০০ গাছ টেন্ডার করে বিক্রি করেছে বন বিভাগ। এরমধ্যে সদর উপজেলার বাংলা বাজার থেকে ঘোড়ারঘাট পর্যন্ত চার কিলোমিটার, আটং ডিসি রোড থেকে পম-লাকার্তা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার অংশের গাছ কাটা হয়েছে। এছাড়া ভেদরগঞ্জ উপজেলার পুরাতন মোল্লার বাজার থেকে বাংলা বাজার পর্যন্ত এক কিলোমিটার, চরপায়াতলি থেকে হাকিম আলি ব্রিজ পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার, ডামুড্যার স্বনির্ভর থেকে কুতুবপুর পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এবং গোসাইরহাটের দপ্তরি বাড়ি থেকে মলংচরা পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তার গাছ কাটা হয়েছে।

চলতি বছরে বন বিভাগ কেটেছে ১৭০০ গাছ, বেড়েছে দাবদাহ

এসব সড়কের পাশে ছিল অর্জুন, নিম, রেইনট্রি, কড়ইসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। এছাড়া বেশ কয়েকটি সড়কের গাছ বিক্রির অপেক্ষায় চিহ্নিত করে রেখেছে বন বিভাগ। তবে গত তিন বছরে সরকারিভাবে গাছ কাটা হলেও একটি গাছও রোপণ করেনি বনবিভাগ। এতে ছায়াশীতল সড়কগুলো এখন খাঁ খাঁ রৌদ্রে উত্তপ্ত হয়ে পথচারীদের অস্বস্তি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সরেজমিন ছয়গাঁ ও বালার বাজার সড়কে দেখা যায়, সড়কের গাছগুলো এখন আর নেই। বড় বড় গাছগুলো কেটে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এক সময়কার ছায়াযুক্ত সড়কগুলো এখন তীব্র রোদে খাঁ খাঁ করছে।

রুদ্রকর বালার বাজার থেকে ঘোড়ারঘাট পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়কটি একসময় অর্জুন, নিম, হরতকি, কৃষ্ণচূড়া, রেইনট্রি, কড়ই গাছে ঘেরা ছিল। গ্রীষ্মের সময় প্রচণ্ড তাপে স্থানীয় লোকজন জায়গাটিতে গিয়ে স্বস্তি পেতেন। গত কয়েক মাস আগে এ সড়কের অন্তত ৪০০টি গাছ কেটে ফেলা হয়। বর্তমানে তীব্র রৌদ সড়কটিতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইমরান হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রতিবছর গরমকাল এলেই আমরা সবাই মিলে বালার বাজার সড়কের পাশে গিয়ে বসতাম। এখানে যেমন বাতাস প্রবাহিত হতো তেমনি কৃষ্ণচূড়া ফুলের লাল-রঙে রঙিন হয়ে উঠতো। বর্তমানে সড়কের সব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এতে সড়কটির সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি আমাদের এলাকায় দাবদাহ আরও বেড়েছে।’

এ সড়কের মতোই বিভিন্ন গাছের ছায়া দিতো ছয়গাঁ বাংলাবাজার সড়কটি। সেই সড়টির গাছগুলো বিক্রি করে দিয়েছে বন বিভাগ। স্থানীয় কৃষক রমিজ মোল্লা বলেন, ‘এ সড়কের পাশেই আমার ধানের জমি। প্রতিবছর ধান কাটার পর যখন গরমে খুব ক্লান্ত হয়ে যেতাম, তখন সড়কের গাছের নিচে বসে আরাম করতাম। এখন আর সেই বড় বড় গাছগুলো নেই। সব কেটে ফেলা হয়েছে।’

চলতি বছরে বন বিভাগ কেটেছে ১৭০০ গাছ, বেড়েছে দাবদাহ

স্থানীয় সমাজকর্মী অ্যাডভোকেট তৌহিদ কোতোয়াল বলেন, ‘তাপমাত্রা বাড়ার অন্যতম কারণ হলো জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের প্রচুর পরিমাণ গাছ লাগাতে হবে। কিন্তু শরীয়তপুরের বন বিভাগ নতুন করে রাস্তার পাশে গাছ না লাগিয়ে অন্তত দেড় হাজার গাছ কেটে ফেলেছে। এটি সত্যিই দুঃখজনক।’

গাছ কাটার বিষয়টি স্বীকার করে নতুন করে গাছ লাগানোর কথা জানিয়েছে বন বিভাগ। জানতে চাইলে জেলা বন কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন প্রকল্পের আওতায় প্রতি ১০ বছর পর পর বন বিভাগের রোপণ করা গাছ কর্তন করা হয়। চলতি বছরে ১৯ কিলোমিটার সড়কের বেশকিছু গাছ কাটা হয়েছে। তবে আমরা চুক্তিশর্ত অনুযায়ী এবছর অন্তত ১৯ হাজার গাছ লাগাবো।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, সড়কে গাছ কেটে ফেলার বিষয়টি দেখবো। নতুন করে গাছ লাগানোর বিষয়ে পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।