শরবত বিক্রির টাকায় চলে সংসার, ৫ ভাইবোনের পড়ালেখার খরচ

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী
আয়শা সিদ্দিকা আকাশী আয়শা সিদ্দিকা আকাশী , জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০৬:০৫ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

তীব্র গরমে লেবুর শরবত বিক্রি করছেন মা-মেয়ে। দাবদাহে বেড়েছে বেচাকেনা। প্রতিদিন বিক্রি হয় অন্তত দুই হাজার টাকার। এ টাকা দিয়েই চলে তাদের সংসার। জোগাড় হয় পাঁচ ভাইবোনের লেখাপড়ার খরচ।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) মা-মেয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এতথ্য। তারা হলেন মাদারীপুর সদর উপজেলার হাজীর হাওলা গ্রামের ৩ নম্বর ব্রিজ এলাকার রাজ্জাক বেপারীর স্ত্রী ফাতেমা বেগম (৪৫) ও মেজো মেয়ে সুরাইয়া আক্তার (২০)।

মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে ফুটপাতে শরবত বিক্রি করেন মা-মেয়ে। হাসপাতালের রোগী, স্বজন ও পথচারীরাই এ শরবতের ক্রেতা।

মাদারীপুর, পেশা, নারী, গরম, হাসপাতাল, দেশজুড়ে-স্পেশালমা-মেয়ের লেবুর শরবতে চলে সংসার, জোগাড় হয় ৫ ভাইবোনের পড়ালেখার খরচ

কথা হয় সুরাইয়া আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার বাবা রাজ্জাক বেপারী শীতের সময় পিঠা বিক্রি করেন। কিন্তু শীত গেলে তেমন একটা কাজ করতে পারেন না। মাঝেমধ্যে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। তা দিয়ে আমাদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। মামা এ শরবত বিক্রি করতেন। পরে মামার পরামর্শে আমি ও আমার মা লেবুর শরবত বিক্রি শুরু করি। আল্লাহর রহমতে প্রতিদিন প্রায় দুই হাজার টাকার মতো বিক্রি হয়। তা দিয়েই আমাদের সংসার ও আমার পাঁচ ভাইবোনের পড়ালেখার খরচ জোগাড় হয়।’

তিনি বলেন, ‘এ গরমে লেবু দিয়ে ঠান্ডা পানির শরবত পান করতে সবাই পছন্দ করেন। গরমের কারণে বিক্রিও ভালো হচ্ছে।’

সুরাইয়ার মা ফাতেমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার বড় মেয়ে ফাত্তাহ আক্তার মাদারীপুর সরকারি কলেজে অনার্সে পড়ে। সুরাইয়া আক্তার কিছুদূর পড়াশোনা করলেও অভাবের কারণে পরে তা এগোয়নি। সেই আমার সঙ্গে লেবুর শরবত বিক্রি করতে সহযোগিতা করে।’

মাদারীপুর, পেশা, নারী, গরম, হাসপাতাল, দেশজুড়ে-স্পেশালমা-মেয়ের লেবুর শরবতে চলে সংসার, জোগাড় হয় ৫ ভাইবোনের পড়ালেখার খরচ

বাকি সন্তানদের মধ্যে মেয়ে অন্যন্যা আক্তার মাদারীপুর বালিকা উচ্চা বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণি, মিম আক্তার হাজীর হাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি এবং ছোট মেয়ে ময়না আক্তার ও একমাত্র ছেলে স্থানীয় একটি মাদরাসায় প্রথম শ্রেণিতে পড়েন বলে জানান তিনি।

ফাতেমা বেগম বলেন, ‘কাজকে আমরা কখনো ছোট করে দেখি না। তাই মা ও মেয়ে মিলে এই কাজ করছি। এতে আমার সংসার ভালোই চলে যাচ্ছে।’

মাদারীপুর, পেশা, নারী, গরম, হাসপাতাল, দেশজুড়ে-স্পেশালমা-মেয়ের লেবুর শরবতে চলে সংসার, জোগাড় হয় ৫ ভাইবোনের পড়ালেখার খরচ

লেবুর শরবত পান করতে আসা অটোরিকশাচালক সজীব হোসেন বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমে তৃষ্ণায় অনেক কষ্ট হচ্ছিল। তাই এখান থেকে মাত্র ১০ টাকায় এক গ্লাস লেবুর শরবত পান করলাম। এখন কিছুটা হলেও স্বস্তি পেলাম।’

হাসপাতালে মেয়েকে নিয়ে আসা শহরের গোলাবাড়ি এলাকার সিমা আক্তার বলেন, ‘হাসপাতালে মেয়েকে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলাম। অনেক সময় লাগবে। এদিকে গরমে গলা শুকিয়ে গেছে। তাই এখানে এসে এক গ্লাস লেবুর শরবত পান করলাম।’

মাদারীপুর মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মাহমুদা আক্তার কণা বলেন, ‘মা ও মেয়ে দুজনে মিলে পরিশ্রম করে পরিবারের খাবার জোগাড়সহ অন্য পাঁচ ছেলেমেয়ের পড়াশুনার খরচ চালাচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষরাও তা পারেন না।’

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।