মাঝগ্রাম-ঢালারচর রেললাইন প্রকল্পে ধীরগতি


প্রকাশিত: ০৩:২৫ এএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৬

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হচ্ছে না মাঝগ্রাম-ঢালারচর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বর ঈশ্বরদীর অদূরে মাঝগ্রাম স্টেশন থেকে পাবনা পর্যন্ত রেলপথ চালু করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে বলে জানা গেছে। এজন্য প্রকল্পের ব্যয় বরাদ্দও বেড়ে গেছে। বর্তমানে এই ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬শ’ ২৯ কোটি টাকা। প্রথমে ছিল ৯৮২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা।

এ ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা জানান, ১ম ফেজের কাজ ৮০ ভাগ শেষ হয়েছে। এর আওতায় মাঝগ্রাম থেকে পাবনা পর্যন্ত ২৫ কি.মি. রেলপথ ও ৪টি স্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ করে ডিসেম্বরে যাত্রী চলাচলের জন্য ট্রেন চালু করা হবে। ইতোমধ্যে দাশুড়িয়া, টেবুনিয়া ও পাবনায় স্টেশন নির্মাণসহ রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে।

তবে সরেজমিনে মাঝগ্রাম স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, এখানে স্টেশনের সেড নির্মাণ কাজ চলছে। আশপাশে মাটি ভরাট কাজও চলছে। স্টেশনে রেললাইন বসানো হয়েছে, স্টেশন নির্মাণ শেষ হলে রেললাইনের সংযোগ দেয়া হবে। এরপর এই ৪টি স্টেশন রং করার কাজ হবে। তারপর ডিসেম্বরে পাবনা অভিমুখে এই ট্রেনে মানুষ যাতায়াত করবে। মাঝগ্রাম, দাশুড়িয়া, টেবুনিয়া ও পাবনায় যাত্রীরা ওঠানামা করতে পারবেন।

প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা ও রেলওয়ের পাকশী বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী জানান, প্রকল্পের প্রথম ফেজের কাজ ৮০ ভাগ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। এই ফেজে রয়েছে মাঝগ্রাম থেকে পাবনা পর্যন্ত রেলপথ। দ্বিতীয় ফেজে আছে পাবনা থেকে ঢালারচর পর্যন্ত রেলপথ। এই ফেজে এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৩০ ভাগ। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ ৫৪ কিলোমিটার রেলপথের দ্বিতীয় ফেজের কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

Majgram-Rail-Station

তিনি আরও বলেন, ঈশ্বরদীর অদূরে মাঝগ্রাম থেকে পাবনা পর্যন্ত ৩৬টি ছোট ও ২টি বড় ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। পাবনা থেকে ঢালারচর পর্যন্ত ৭৬টি ছোট ও ৯টি বড় ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। প্রথম দফায় ১৫৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে মাটি ভরাট, রেললাইন স্থাপন, রেলক্রসিং গেট ও পাবনা পর্যন্ত ৪টি স্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে ফিনিসিং কাজ চলছে।

মাঝগ্রাম-ঢালারচর ভায়া পাবনা রেলপথের কাজ ২০১০ সালের অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয়। এর আগে ওই বছরেই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) এর বৈঠকে প্রকল্পটি পাশ হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রথমে ৯৮২ কোটি ৮৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ১৬শ’ ২৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের একজন কর্মকর্তা।

এই প্রকল্পের আওতায় মাঝগ্রাম রেলস্টেশন থেকে পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর পর্যন্ত ৭৮ কিলোমিটার রেললাইন ও ১১টি রেলস্টেশন নির্মাণ করা হচ্ছে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। প্রথম দফায় শুধু পাবনা পর্যন্ত কাজ শেষ করতেই নভেম্বর পর্যন্ত সময় লাগবে। পাবনা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল ডিসেম্বরে শুরু করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে।

Majgram-Rail-Station

স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় এই রেলপথ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে জমি অধিগ্রহণ ও মাঝগ্রাম থেকে মাটি ভরাট কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রকল্পটিও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ নির্বাচনের সময় এক টেলি-কনফারেন্সে পাবনায় রেলপথ স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেন এবং সেই অনুযায়ী কাজ শুরু হয়।

এই রেলপথ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে উত্তরাঞ্চলের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটের ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। রেলপথে পণ্য পরিবহণে স্বল্প খরচের কারণে এই অঞ্চলে উৎপাদিত কৃষি পণ্য সহজে ও কম সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে। মানুষজনও কম সময় ও খরচে যাতায়াত করতে পারবে।

পাবনা জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন এই রেলপথ যা সম্পন্নের দিন গুণছে তারা। কবে চড়বে নতুন ঝকঝকে রেল গাড়িতে সেই অপেক্ষায় রয়েছে এই অঞ্চলের অগণিত মানুষ।

এসএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।