গরমে অর্ধেকে নেমেছে বেনাপোল বন্দরে পণ্য লোড-আনলোড
সারা দেশে চলমান দাবদাহের কারণে প্রচণ্ড গরমে একটানা কাজ করতে পারছেন না বেনাপোল বন্দরের হ্যান্ডলিং শ্রমিকরা। ফলে ট্রাকে পণ্য ওঠানামায় যেমন ধীর গতি দেখা দিয়েছে, তেমনি কমেছে তাদের দৈনিক আয়। আগে প্রতিদিন যেখানে ২০ ট্রাক লোড হতো, বর্তমানে গরমের কারণে শ্রমিকরা দিনে ৮ থেকে ১০ ট্রাক লোড দিতে পারছেন।
বেনাপোল স্থলবন্দরের শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত দুই সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড গরম। এই গরমে ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের বেশি একটানা কাজ করা যাচ্ছে না।
বন্দরের শ্রমিক ইউনুছ আলি বলেন, আগে ২০ জন শ্রমিক ৩ ঘণ্টায় একটি ট্রাকের পণ্য আনলোড করতাম। এখন সময় লাগছে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। অনেকে গরমে কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। একটানা কাজ করতে না পারায় আয় কমেছে শ্রমিকদের।
স্থলবন্দরের শ্রমিক সেলিম আহম্মেদ বলেন, অন্যান্য সময় সারাদিন কাজ করে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা আয় করতাম। এখন ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেশি আয় করা সম্ভব হচ্ছে না।
ট্রাকচালক মিন্টু মিয়া বলেন, গরমের কারণে শ্রমিকরা সেভাবে কাজ করতে পারছে না। সময় মতো ট্রাক লোড হচ্ছে না। তাই আমাদেরও সময় অপচয় হচ্ছে। বন্দরে বেশি সময় বসে থাকতে হচ্ছে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক আবু নাসির উদ্দিন বলেন, গরমের কারণে শ্রমিকরা লাগাতার কাজ করতে না পারায় ভারতীয় ট্রাক থেকে পণ্য খালাস করতে অধিক সময় চলে যাচ্ছে। ট্রাকে পণ্য লোড করতেও তুলনামূলক বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে। এতে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের একাংশের (রেজি. নম্বর-৯২৫) সভাপতি রাজু আহমেদ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার বেশি গরম পড়েছে। শ্রমিকরা লাগাতার কাজ করতে না পারায় পণ্য ওঠানামায় (লোড-আনলোড) বিলম্ব হচ্ছে। প্রচণ্ড রোদ আর গরমের কারণে বন্দরের শেড ইয়ার্ড ও গুদামের ভেতরে শ্রমিকেরা কাজ করতে পারছেন না। এক ট্রাক লোড দেওয়ার পর বিশ্রাম নিয়ে আবার আরেক ট্রাক লোড দিচ্ছেন। এতে প্রতিদিন যেখানে ২০ ট্রাক লোড হতো, বর্তমানে গরমের কারণে শ্রমিকরা ৮ থেকে ১০ ট্রাক লোড দিতে পারছেন।
বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের আরেকাংশের (রেজি. নম্বর-৮৯১) সম্পাদক জানে আলম বলেন, মাস খানেক বৃষ্টির দেখা নেই। তাই প্রচণ্ড তাপদাহে শ্রমিকরা কাজ এগিয়ে নিতে পারছে না। প্রচণ্ড গরমের কারণে হ্যান্ডলিং শ্রমিকরা স্বস্তিতে কাজ করতে পারছেন না।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম জানান, বন্দরে লোড আনলোডে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে প্রচণ্ড গরমে শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন না। লোড আনলোডে আগের চেয়ে এখন সময় বেশি লাগছে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে তাদেরকে প্রচুর পানি খেতে বলা হচ্ছে। পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় একটু সমস্যা হচ্ছে। তাদের খাবার পানির জন্য বন্দর থেকে একটা টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আর তারা নিজেরা দুইটা টিউবওয়েলের ব্যবস্থা করবেন। খাবার পানির ব্যবস্থা হয়ে গেলে শ্রমিকদের কাজ করতে কষ্ট কম হবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, প্রতিদিন ভারত থেকে গড়ে ৪০০ থেকে ৪৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক আমদানি পণ্য নিয়ে বেনাপোলে আসে। বাংলাদেশ থেকে গড়ে দেড়শ থেকে ২০০ ট্রাক রপ্তানি পণ্য নিয়ে ভারতে যায়। প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩শ থেকে ৪শ ট্রাক পণ্য খালাশ করে ভারতে ফেরত যায়। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে লোডআনলোড ব্যাহত হচ্ছে।
এফএ/এএসএম