২০ বছর পর নবজাতক জন্ম নিলো পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের মুরাদপুর ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে দীর্ঘ ২০ বছর পর নরমাল ডেলিভারিতে নবজাতকের জন্ম হয়েছে। শনিবার (২০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুরাদপুর ইউনিয়নের পূর্ব ভাটেরখিল গ্রামের প্রসূতি তানজিনা আক্তারের গর্ভে ওই নবজাতকের জন্ম হয়। বর্তমানে মা ও নবজাতক সুস্থ আছেন।
এদিকে দীর্ঘ ২০ বছর পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নবজাতকের জন্ম হওয়ায় নবজাতকের মা ও বাবাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও মুরাদপুর ইউনিয়ন কেন্দ্রে দায়িত্বরত চিকিৎসক ও সহকারীরা।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের তথ্যমতে সর্বশেষ ২০০৪ সালে এই কেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারিতে দুটি নবজাতকের জন্ম হয়। কিন্তু এই কেন্দ্রে জনবল সংকট ও পরিবেশগত সমস্যা থাকার কারণে প্রসূতিরা আসতে চাইতেন না। যার কারণে ডেলিভারি কার্যক্রম করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়াও এ কেন্দ্র থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দূরত্ব মাত্র পাঁচ মিনিটের পথ। যার কারণে প্রসূতিরা এখানে আসতে চান না।
মুরাদপুর ইউনিয়নের পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের সহকারী লক্ষ্মী রাণী দাশ বলেন, সিজারিয়ান যুগে কিছু স্বার্থ ও অর্থলোভী চিকিৎসক প্রসূতি মহিলাদেরকে ভয় ধরিয়ে দেন। যার কারণে প্রসূতি মহিলারা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে আসতে চান না। কিন্তু উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিয়াউল কাদের স্যারের নির্দেশনায় ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র প্রসূতি মহিলাদের প্রতি তৎপরতা বাড়ায়। সন্তান প্রসবে তাদের মনে যে একটা ভয় কাজ করে তা দূর করার চেষ্টা করি আমরা। এছাড়াও কেন্দ্রের পুরো পরিবেশটাই ছিল জরাজীর্ণ। নরমাল ডেলিভারির জন্য যেসব যন্ত্রপাতি প্রয়োজন তা ছিল না। অনেকে জানতোই না যে এখানে নরমাল ডেলিভারিতে নবজাতকের জন্ম হয়। বর্তমানে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা জিয়াউল কাদের স্যারের নেতৃত্বে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিত্র পাল্টে গেছে। প্রতিদিন আমরা সন্তান সম্ভাবনা মহিলাদের খোঁজখবর রাখি।
তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে এই কেন্দ্রে কর্মরত আছি। আমার জানামতে ২০০৪ সালে এইখানে সর্বশেষ নবজাতকের ডেলিভারি কার্যক্রম হয়। দীর্ঘ ২০ বছর পর নবজাতাকের জন্ম হওয়ায় আমরা খুব আনন্দিত।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জিয়াউল কাদের বলেন, চট্টগ্রাম জেলার পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপপরিচালক আবুল কালামের নির্দেশে উপজেলার প্রতিটি কেন্দ্র আধুনিকায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি কেন্দ্রেকে সাজানো হয়েছে প্রসূতি মহিলাদের আস্থারস্থল হিসেবে।
তিনি আরও বলেন, যখন শুনেছি প্রসব বেদনা নিয়ে একজন প্রসূতি ভর্তি হয়েছেন, তখন থেকেই তদারকির কোনো কমতি ছিল না। তিনি সুস্থ ও সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্তভাবে একটি কন্যা সন্তান প্রসবের পর মনে হয়েছিল পৃথিবীর সুখ সবগুলো আমার। প্রতিটি কর্মের তৃপ্তি রয়েছে আর এই তৃপ্তির অনুভূতি যেন অন্যরকম।
তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিটি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্রের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে একটি বাজেট থাকে। এই বাজেটটি আমরা কখনো পাইনি। যদি এই বাজেটটি পাই তাহলে প্রসূতি মহিলাদেরকে সেবা দানে আরও সুবিধা হবে।
এম মাঈন উদ্দিন/এফএ/এমএস