বেনাপোল স্টেশনে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি বেনাপোল (যশোর)
প্রকাশিত: ০৯:২০ এএম, ১২ এপ্রিল ২০২৪

মালামাল ও যাত্রী পরিবহনে বছরে প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি টাকা আয় হয় যশোরের বেনাপোল রেলস্টেশনে। তবে বাড়েনি সুযোগ-সুবিধা। ডিজিটাল যুগেও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি এ স্টেশনে। রয়েছে জনবল সংকট।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের আগে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ চালু ছিল। যুদ্ধকালীন ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে কিছুদিনের জন্য এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে আবার চালু হয়। কিন্তুু ১৯৭৪ সালে লোকসানের কবলে পড়ে রেল চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর পুনরায় রেলপথটি চালুর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলেন বেনাপোল যশোরসহ গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। পরে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে বেনাপোল-খুলনা ভায়া যশোরের সঙ্গে ট্রেনটি চালু হয়।

বেনাপোল দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ট্রেনে আমদানি বাণিজ্য শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। এরপর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল পরীক্ষামূলক চালু করা হয় কলকাতা-খুলনা ভায়া বেনাপোলের মধ্যে ‘বন্ধন একপ্রেস’ নামের যাত্রীবাহী ট্রেনটি। পরে একই সালের ১৬ নভেম্বর থেকে কলকাতা-খুলনার মধ্যে যাত্রীবাহী ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ বাণিজ্যিকভাবে যাত্রা শুরু করে।

বেনাপোল স্টেশনে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ

ভারতগামী যাত্রীসহ এ অঞ্চলের যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্ত করে ২০১৯ সালের ১৭ জুলাই বেনাপোল-ঢাকা রুটে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বেনাপোল স্টেশন থেকে সপ্তাহে দুটি ট্রেন খুলনা-কলকাতা (বন্ধন এক্সপ্রেস), প্রতিদিন দুটি লোকাল ট্রেন বেনাপোল কম্পিউটার (বেতনা এক্সপ্রেস) বেনাপোল-খুলনা ও সপ্তাহে ছয়দিন দুপুর ১টায় একটি আন্তঃনগর ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ বেনাপোল-ঢাকার মধ্যে চলাচল করে। যশোর, খুলনা ও ঢাকায় যেতে বাসের চেয়ে ট্রেনের ভাড়া অনেক কম বলে ট্রেনযাত্রাকে অনেকটা পছন্দ করেন যাত্রীরা।

বেনাপোল স্টেশনে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ

তবে সরেজমিন দেখা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে বেনাপোল রেলস্টেশনের কার্যক্রম। গণশৌচাগারের অভাব, যাত্রী বিশ্রামাগার অপরিচ্ছন্ন, বিদ্যুৎ চলে গেলে ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হওয়া, টোপলাটানা পাটির (যারা চোরাই মালামাল বহন করেন) উপদ্রুপ, বিশুদ্ধ পানির অভাব এবং গরু-ছাগলের বিরাণভূমিতে পরিণত হয়েছে স্টেশন মাঠ এলাকা।

যাত্রীদের অভিযোগ, এখানে উন্নতমানের গণশৌচাগার না থাকায় নারী যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। একটি প্রথম শ্রেণির ওয়েটিং রুম থাকার কথা থাকলেও নেই। একজন সুইপার কাগজ-কলমে থাকলেও তাদের কাজে দেখা যায় না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। খাবার পানির জন্য একটি টিউবয়েল ছিল। তাও উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন স্টেশনে কোনো টিউবয়েল নেই। যাত্রীরা এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করেন পানির জন্য।

রেলওয়ে স্টেশনে মেডিকেলের কোনো কার্যক্রম নেই। ফলে ট্রেনে কাটা রোগী, সাধারণ যাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হন। স্টেশনের প্রবেশমুখে ও সড়কে যততত্র ইজিবাইক ও ভ্যান রেখে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি করা হচ্ছে।

বেনাপোল স্টেশনে যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ

স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে স্টেশনের প্রথম প্ল্যাটফর্মের চাল দিয়ে বৃষ্টি পড়ে। এতে দুর্ভোগ পোহাতে হয় যাত্রীদের। হাঁটুসমান পানি জমে থাকে। যাত্রীরা হাঁটতে পারেন না। জুতা-স্যান্ডেল হাতে নিয়ে ট্রেনে উঠতে হয়। ভারতীয় পণ্য চোরাচালানি হয় এসব ট্রেনে। ট্রেনের বসার সিটে চোরাচালানি পণ্য রাখা হয়।

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনের (বেনাপোল-ঢাকা) জন্য অপেক্ষা করছিলেন যাত্রী সিদ্দীকুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি ঢাকায় যাবো। অনলাইনে টিকিট কাটতে হবে। তবে সবসময় অনলাইনে টিকিট পাওয়া যায় না। সমস্যায় পড়তে হয়। বগি বাড়ালে এ সমস্যা থাকতো না। স্টেশনে নেশাখোরদের উৎপাত রয়েছে।’

jagonews24

ট্রেনে চোরাকারবারিদের দৌরাত্ম্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বেনাপোলের যাত্রী আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর হলে চোরকারবারিদের এতো তৎপরতা থাকতো না।

বেনাপোল রেল ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) নজরুল ইসলাম বলেন, যাত্রীসেবা বাড়াতে ও চোরাচালানি প্রতিরোধে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। মাইকিং করে চোরাচালানিদের পণ্য না ওঠানোর জন্য সতর্ক করে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বেনাপোল রেলস্টেশনের মাস্টার মো. সাইদুজ্জামান বলেন, গত অর্থবছরে স্টেশন থেকে প্রায় দুই কোটি টাকা আয় হয়েছে। শুধু গতবছরে নয়, প্রতি অর্থবছরে এ স্টেশন থেকে সরকার আয় করেছে কোটি টাকার ওপরে। স্টেশনের সমস্যাগুলো কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জামাল হোসেন/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।