এক ঘণ্টা আগেই কানায় কানায় পূর্ণ শোলাকিয়া ময়দান
নামাজ শুরুর এক ঘণ্টা আগেই কানায় কানায় পূর্ণ দেশের সর্ববৃহৎ ও প্রাচীন ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। বৃহস্পতিবার (১১ এপ্রিল) সকাল ৯টার দিকে এ চিত্র দেখা যায়। এখানে ১৯৭তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আজ সকাল ১০টায়।
নামাজের ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। কোনো কারণে তিনি না আসতে পারলে জামাতের ইমামতি করবেন শহরের বড় বাজার মসজিদের খতিব মাওলানা শোয়াইব বিন আব্দুর রউফ।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঈদগাহ মাঠ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ।
প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের একদিন আগেই চলে এসেছেন অনেক মুসল্লি। ঈদের দিন ভোর থেকে রিজার্ভ বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে আসতে থাকেন হাজারো মুসল্লি।
গাইবান্ধা থেকে আসা মুসল্লি জাকির হোসেন বলেন, এ ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করতে শুক্রবারে চলে এসেছি। এটি একটি প্রাচীন ঈদগাহ ময়দান। এখানে লাখ লাখ মুসল্লি একসঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন। তাই এখানে এসেছি। সবাই মিলে আল্লাহর কাছে দেশ ও মুসলিম উম্মার জন্য দোয়া করবো।
ঈদুল ফিতরের জামাতে অংশ নিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নাতির সঙ্গে এসেছেন আবুল কাশেম নামে এক বৃদ্ধ।
তিনি বলেন, ২০ বছর ধরে শোলাকিয়ায় জামাতে নামাজ পড়তে আসছি। এখানে লাখ লাখ লোকের সঙ্গে নামাজ পড়ে মনের তৃপ্তি পাওয়া যায়।
এদিকে স্থানীয় কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপির পক্ষ থেকে দূর দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিদের জন্য ঠান্ডা পানিসহ বিভিন্ন খাবার নিয়ে মাঠের চারপাশের প্রবেশদ্বারে কাজ করছেন তার সমর্থকরা।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, দূর দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিরা যাতে গরমে কষ্ট না পায় এজন্য আমাদের এমপি ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি ঠান্ডা পানিসহ বিভিন্ন খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। মাঠের চারপাশের প্রবেশদ্বারে আমাদের কয়েকশ স্বেচ্ছাসেবক মুসল্লিদেরকে শরবত, ঠান্ডা পানীয় ও খাবার দিচ্ছেন।
ঈদগাহ মাঠে পুলিশ, বিজিবি র্যাবসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য কাজ করছেন।
ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে ২০১৬ সালের ৭ জুলাই ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য, এক নারী এবং এক জঙ্গিসহ চারজন নিহত হন। এ হামলায় পুলিশসহ ১৬ মুসল্লি আহত হন। কিন্তু তারপরও ভাটা পড়েনি ঐতিহাসিক এ ঈদগাহ ময়দানের ঈদের জামাতে।
জনশ্রুতি আছে, বারোভূঁইয়া নেতা ঈশা খাঁর বংশধর শাহ সুফি সৈয়দ আহমদ ঈদের জামাতের মোনাজাতে ভবিষ্যতে মাঠে মুসল্লিদের প্রাচুর্যতা প্রকাশে ‘সোয়া লাখ’ কথাটি ব্যবহার করেন। অন্য একটি মতে, সেই দিনের ওই জামাতে এক লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ লোক জমায়েত হন। ফলে ‘সোয়া লাখে’র অপভ্রংশ হয়ে ‘শোলাকিয়া’ নামটি চালু হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ১৯৫০ সালে স্থানীয় দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁ (মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর) ঈদগাহের জন্য ৪ দশমিক ৩৫ একর জমি শোলাকিয়া ঈদগাহে ওয়াকফ করেন। এ মাঠে ২৬৫টি কাতার আছে। প্রতিটি কাতারে ৫০০ মুসল্লি নামাজের জন্য দাঁড়াতে পারেন।
মুসল্লির উপস্থিতির দিক থেকে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত ঈদুল ফিতরের জামাতই এ উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ জামাত হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে।
এসকে রাসেল/এফএ/এমএস