বাড়ি ঢুকে মালামাল লুট, বোনকে হত্যার বর্ণনা দিলেন ভাই

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:৪৩ এএম, ০৬ এপ্রিল ২০২৪

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় প্রবাসীর স্ত্রীকে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় আপন ভাইসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর পিবিআই। ঋণগ্রস্ত ভাই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে আপন বোনের ঘরে বন্ধুকে নিয়ে চুরি করার পরিকল্পনা করেন। এ সময় বোন চিৎকার করলে তার হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যা করে থাকা ঘরে টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যান।

শুক্রবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সকালে কাপাসিয়া উপজেলার সিংহশ্রী ইউনিয়নের পূর্ব ভিটিপাড়া গ্রামের দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী মো. মোশারফ হোসেনের স্ত্রী শাহনাজ বেগম শিমুর (৩৯) মরদেহ নিজ ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা মো. সিরাজ উদ্দিন বেপারী কাপাসিয়া থানায় অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার জেরে নিহত শাহনাজ বেগম শিমুর আপন ছোট ভাই কাপাসিয়ার কুলগঙ্গা গ্রামের মো. সিরাজ উদ্দিন বেপারীর ছেলে মো. কামরুজ্জামান রুবেল (৩৬) ও শেরপুর জেলার শ্রীবরদী থানার মামদাবাড়ি গ্রামের আস্কর আলীর ছেলে মো. মিনাল ওরফে মিস্টারকে (২১) গ্রেফতার করে পিবিআই।

গাজীপুর পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক ও তদন্ত কর্মকর্তা মো. সালেহ্ ইমরান বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পরপরই কাপাসিয়া থানা পুলিশের পাশাপাশি গাজীপুর পিবিআইয়ের একাধিক টিম মামলাটির রহস্য উদঘাটনে ছায়া তদন্তে নামে। গোয়েন্দা তথ্য ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মূল আসামি মো. কামরুজ্জামান রুবেলকে বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেলে গাজীপুর মহানগরের গাছা থানা এলাকা থেকে ও পরে তার দেওয়া তথ্য মতে একই দিন মো. মিনাল ওরফে মিস্টারকে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতাররা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, নিহত শিমুর আপন ছোট ভাই রুবেল গাজীপুরে একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করতেন। পাঁচ মাস আগে রুবেল ওই হোটেলের চাকরি ছেড়ে দিলে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েন, অনেকের কাছ থেকে টাকা ঋণ করেন। ঋণে জর্জরিত রুবেল ঋণের টাকা পরিশোধ করতে বোন শিমুর বাসায় চুরির পরিকল্পনা করেন এবং দুইদিন আগে অপর আসামি মো. মিনাল ওরফে মিস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।

ঘটনার দিন বিকেলে মিস্টার জয়দেবপুর রেল স্টেশনে আসেন। এ সময় রুবেল ও মিনাল একটি ব্যাগের মধ্যে একটি সুইচ গিয়ার চাকু, প্লাস, গামছা, কেচি নিয়ে ট্রেনে করে শ্রীপুর স্টেশনে নামেন। সেখান থেকে অটোরিকশা ভাড়া করে বরমী পুরাতন বাস স্ট্যান্ড এলাকায় যান। সেখানে কিছু সময় অপেক্ষা করে তারা অটোরিকশায় রাত ৮টার দিকে বরামা ব্রিজ এলাকায় যান। বরামা ব্রিজ পার হয়ে হেঁটে তারা ভিকটিম শাহনাজ আক্তার শিমুর বাড়ির সামনে আখক্ষেতে লুকান।

রাত ১২টার দিকে রুবেল ও মিস্টার শিমুর বাড়ির সীমানা প্রাচীরের ওপর দিয়ে বাসার ছাদে ওঠেন। ছাদ থেকে রান্না ঘরের সিমেন্টের টিন খুলে রান্নাঘরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। রান্নাঘর থেকে দরজা খুলে বাইরে এসে বাড়ির পেছনের খোলা জানালা দিয়ে বাঁশের লাঠি দিয়ে ভেতরের সিটকিনি খুলে ভেতরে ঢোকেন।

এ সময় তাদের সাড়াশব্দ পেয়ে ঘুম ভাঙলে চিৎকার শুরু করেন শিমু। এতে মিনাল সুইচ গিয়ার ছুরি দেখিয়ে ভয় দেখান, কিন্তু শিমু চিৎকার না থামালে গামছা দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে এবং রুবেল শিমুর হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলেন। এ সময় রুবেলের দুই হাতে শিমুর হাতের নখের আচড় লাগে। রুবেলকে যাতে চিনতে না পারে, সেজন্য শিমুর চোখ, মুখ, গামছা দিয়ে বেঁধে ফেললে শিমুর সঙ্গে মিনালের ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এ সময় আসামি মিস্টার শিমুর মুখে আঘাত করেন এবং শিমুর বুকের ওপর বসে গলা চেপে ধরেন।

এরপর আসামি রুবেল টেবিলের ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে স্বর্ণালংকার, তিন হাজার টাকা ও শিমুর মোবাইল ফোন নিয়ে শিমুর হাত ও পা বেঁধে বাড়ির পকেট গেট দিয়ে বের হয়ে যান তারা। পরদিন সকালে রুবেল চাকু, প্লাস ও মোবাইল সেট ভেঙে ঝাজর এলাকায় ব্রিজের নিচে খালের পানিতে ফেলে দেন এবং লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকার দেড় লাখ টাকায় বিক্রি করেন। রুবেলকে গ্রেফতারের পর স্বর্ণ বিক্রির ৫৭ হাজার টাকা উদ্ধার ও তার দেওয়া তথ্যমতে গাজীপুর মহানগরের ঝাজর কবরস্থান ব্রিজের নিচে খাল থেকে প্লাস, সুইচ গিয়ার চাকু ও চোরাইকৃত মোবাইল সেটের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়েছে।

গাজীপুর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বলেন, নিহতের ভাই রুবেল ও মিস্টার স্বেচ্ছায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। স্বর্ণ বিক্রির অবশিষ্ট টাকা ও স্বর্ণ উদ্ধারে অভিযান চলছে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।