স্বস্তির ঈদযাত্রা নিশ্চিতে প্রস্তুত দৌলতদিয়া ঘাট

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ১০:২২ এএম, ০২ এপ্রিল ২০২৪

স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ঈদে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার হিসেবে পরিচিত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ফলে আসন্ন ঈদে অতিরিক্ত যানবাহন ও যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঘাট কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন।

এ নৌরুটে এবার যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে চলাচল করবে ছোট-বড় ১৫টি ফেরি ও ২০টি লঞ্চ এবং দৌলতদিয়া প্রান্তের ৭টি ফেরিঘাটের মধ্যে সচল থাকবে ৩টি ফেরি ঘাট। একইসঙ্গে যাত্রী পারপারে প্রস্তুত থাকবে লঞ্চ ঘাট। এছাড়া যাত্রী হয়রানি, ছিনতাইকারী ও দালালরোধে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপশি ২৪ ঘণ্টা ঘাট এলাকায় থাকবে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাট গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখন নেই সেই আগের মতো যানবাহনের লম্বা সারি এবং যাত্রী ও হকারদের হাঁকডাক। পদ্মা সেতু চালুর আগে ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া প্রান্ত দিয়ে ৪ থেকে ৫ হাজার যানবাহন পদ্মা নদী পারাপার হলেও সে সংখ্যা এখন কমে এসেছে দুই হাজারের নিচে।

স্বস্তির ঈদযাত্রা নিশ্চিতে প্রস্তুত দৌলতদিয়া ঘাট

এরমধ্যে এবার ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ৬ থেকে ১৬ এপ্রিল নদীতে বন্ধ থাকবে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল। এছাড়া দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা যানজটমুক্ত রাখতে ঈদের আগের ৩ দিন ও ঈদের পরের ৩ দিনসহ মোট ৭ দিন পচনশীল ও জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ব্যাতীত সকল ধরনের পণ্যবাহী ট্রাক পারাপার বন্ধ রাখা হবে। পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণ করা হবে ছোট গাড়ি, মাহেন্দ্রা, অটোরিকশাসহ অন্যান্য যানবাহন।

অন্যদিকে দৌলতদিয়া লঞ্চ ও ফেরিঘাট এলাকার সড়কে আলোকসজ্জা, অস্থায়ী টয়লেট, মার্তৃদুগ্ধ কেন্দ্রের পাশাপাশি যাত্রীদের জন্য থাকবে সুপেয় পানির ব্যবস্থা। এছাড়া মহাসড়কে অবৈধ যানবাহন চলাচলে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি ভাড়াচার্ট ব্যাতীত অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বা যাত্রী হয়রানি করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানা গেছে।

যাত্রী তুহিন মৃধা, মাহবুব ও আব্দুস সাত্তার বলেন, আগে বছরের প্রায় সারা বছর এই দৌলতদিয়া ঘাটে তাদের দুর্ভোগে পড়তে হতো। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে সেই দুর্ভোগ একেবারে কমে গেছে। এখন তারা সরাসরি ফেরিতে উঠতে পারেন। ঈদে কর্তৃপক্ষ যদি সব ঠিকঠাকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাহলে তাদের কোনো ভোগান্তি বা দুর্ভোগ হবে না।

যানবাহনের চালক জিহাদ আলী, নুরুল আমিন, ইসমাইল ও মহিউদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে থাকলেও এখন আর তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয় না। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকেই তাদের ভোগান্তি দূর হয়েছে। এখন ঘাট সম্পূর্ণ ফাঁকা, তারা সরাসরি এসে ফেরি পাচ্ছেন। ঈদে একটু যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বাড়বে। সেই দিক বিবেচনা করে ফেরিগুলো সঠিকভাবে চালালে ঈদে কোনো ভোগান্তি হবে না।

দৌলতদিয়া লঞ্চ ঘাটের ম্যানাজার মো. হাতেম আলী মিয়া বলেন, ঈদ উপলক্ষে তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। এবার যাত্রী পারাপারের সুবিধার্থে প্রাকৃতিক দূর্যোগ ব্যাতীত সার্বক্ষণিক ২০টি লঞ্চ চলাচল করবে। যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য লঞ্চে সব ধরনের ব্যবস্থা এবং প্রতিটি লঞ্চের ফিটনেস ও কাগজপত্র ঠিক-ঠাক আছে।

স্বস্তির ঈদযাত্রা নিশ্চিতে প্রস্তুত দৌলতদিয়া ঘাট

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক মো. সালাহউদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ার পর দৌলতদিয়ার ফেরিগুলো গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে। বর্তমানে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে তাদের যে সক্ষমতা রয়েছে, এখন তার চেয়ে গাড়ির সংখ্যা কম। আশা করছেন ঈদে ৩টি ঘাট দিয়ে ১৫টি ফেরির মাধ্যমে সবাইকে ভালোমতো পারাপার করতে সক্ষম হবেন। বর্তমান অবস্থায় ৩টি ঘাটের বেশি প্রয়োজন হয় না এবং এবার কোনো ধরনের দুর্ভোগ হবে না বলেও তিনি আশাবাদী।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন ও আনন্দমুখর পরিবেশে করার জন্য সকলকে নিয়ে প্রস্তুতিমূলক সভা করেছেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঈদের আগের ও পরের ৩ দিন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, পচনশীল সামগ্রী ও ওষুধ ছাড়া সকল ধরনের ট্রাক, কার্ভাডভ্যান পারাপার বন্ধ থাকবে। এছাড়া ৬ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত নদীতে বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ থাকবে এবং ঈদের যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বৃদ্ধির আগেই ঘাটের অ্যাপ্রোচ সড়কসহ যে সকল স্থানে সমস্যা রয়েছে সেগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে। আশা করছি এবার সকলের সহযোগিতায় একটি উৎসবমূখর ঈদ উপহার দিতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, যাত্রী হয়রানি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি এবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ৩ শিফটে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করবেন।

রুবেলুর রহমান/এফএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।