প্রসূতির মৃত্যু
ঝিনাইদহের দারুস শেফা হাসপাতালকে জরিমানা, ওটি সিলগালা
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে দারুস শেফা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে লাভলী বেগম (২৬) নামে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ ঘটনায় শনিবার (৩০ মার্চ) বিকেলে ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটার (ওটি) সিলগালা ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নিহত লাভলী বেগম কালীগঞ্জ পৌরসভার বলিদাপাড়ার বাসিন্দা। স্বামী এনামুল কবিরের চাকরির সুবাদে তিনি কালীগঞ্জে বসবাস করতেন। তাদের গ্রামের বাড়ি জেলার হরিণাকুণ্ডু উপজেলার তৈলটুপি গ্রামে।
রোগী মৃত্যুর অভিযোগ পেয়ে শনিবার বিকেল ৩টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহানের নেতৃত্বে ক্লিনিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এসময় ক্লিনিকের মালিক ডা. জহুরুল ইসলামকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা ও ওটি সিলগালা করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন ও কালীগঞ্জ থানার পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাভলী বেগম দ্বিতীয়বারের মতো সন্তান জন্ম দিতে শুক্রবার (২৯ মার্চ) সকালে কালীগঞ্জ শহরের কালিবাড়ি মোড় এলাকার দারুস শেফা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন। সেখানে বিকেল ৪টার দিকে তার অস্ত্রোপ্রচার করেন ডা. রেকসোনা পারভীন। লাভলী বেগম কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু তার শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। রক্ত বন্ধ না হওয়ায় তাকে নেওয়া হয় অপারেশন থিয়েটারে। রাত ৮টা পর্যন্ত রোগীকে দ্বিতীয় অস্ত্রোপচারের কথা বলে অপারেশন থিয়েটারেই রাখা হয়।
স্বজনরা এসময় রোগীর অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে অপারেশন থিয়েটারের ভেতর থেকে বারবার জানানো হয়, রোগী ভালো আছে। সেলাই শেষ করেই তাকে বেডে দেওয়া হবে। তবে দীর্ঘসময় পার হলেও রোগীকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের না করাই স্বজনদের মনে সন্দেহ হয়। এরপর একজন অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশ করে দেখেন রোগী অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। অপারেশন থিয়েটারের মেঝে রক্তে ভরে গেছে।
এসময় ডা. রেকসোনা রোগীর স্বজনদের বলেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য লাভলী বেগমকে এখনই যশোরে নেওয়া প্রয়োজন। রাতেই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ জোর করেই যশোর সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। শনিবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লাভলী বেগম।
রোগীর স্বজন সাদ্দাম হোসেন জানান, দারুশ শেফা প্রাইভেট হাসপাতালের ডাক্তারের অপচিকিৎসায় লাভলী বেগম মারা গেছেন। ডা. রেকসোনা পারভীন অপ্রয়োজনে তার জরায়ু কেটে ফেলেছেন। জরায়ু কেন কাটা হলো এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর তিনি দিতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে শেফা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চিকিৎসক রেকসোনা পারভীনের সঙ্গে ফোনে কথা বলার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। পরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গেলে নিরাপত্তারক্ষীরা বলেন, ম্যাডাম আজ আসেননি ।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলমগীর হোসেন বলেন, দারুস শেফা প্রাইভেট হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে প্রায়ই রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন। তবে হাসপাতালের মালিকপক্ষ সমঝোতা করাই শেষ পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। আজকের ঘটনা জানার পর অভিযান চালিয়ে ক্লিনিকটিকে জরিমানা ও ওটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এসআর/এএসএম