৩০০ বছরের পুরোনো কাটাগড়ের মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৬:০৭ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২৪

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের কাটাগড়ে বসেছে প্রায় ৩০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ‘কাটাগড়ের মেলা’। স্থানীয় সুফি সাধক সগীর শাহ দেওয়ানের মাজারকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর ২৬ মার্চ (বাংলা ১২ চৈত্র) প্রায় সহস্র একর জমির ওপর বসে এ মেলা।

মেলা শুরুর সঠিক ইতিহাস জানা নেই কারোর। তবে এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিদের মতে, ফকির-সন্ন্যাসী আন্দোলনের আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন দেওয়ান শাগের শাহ (রহ.)। ধারণা করা হয়, ১৮ শতকের গোড়ার দিকে কাটাগড়ে আস্তানা গাড়েন তিনি। ১৮ শতকের প্রথমদিকে মারা যান এ আধ্যাত্মিক সাধক। তার মৃত্যুর দিন ভক্তরা জড়ো হয়ে উরসের আয়োজন করেন। কালক্রমে সে উরস ঘিরে জমে ওঠে এ ঐতিহ্যবাহী মেলা।

৩০০ বছরের পুরোনো কাটাগড়ের মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজ

এলাকাবাসী জানান, প্রতিবছর চৈত্র মাসের ১২ তারিখ থেকে তিন দিনব্যাপী এ মেলা শুরু হলেও রেশ থাকে সপ্তাহব্যাপী। ফার্নিচারসহ বিভিন্ন মিষ্টিসামগ্রীর পসরা বসে মেলায়। চলে এক মাস ধরে। মেলাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাজারও ভক্ত, ফকির-সন্ন্যাসীর আগমন ঘটে।

সরেজমিন দেখা যায়, মাজারের পাশে প্রায় সহস্র একর এলাকাজুড়ে মেলা বসেছে। মেলায় পুতুল নাচ, সার্কাস, ভ্যারাইটি শো, যাত্রাপালা, জাদু, নাগরদোলার পাশাপাশি ফার্নিচার, মিষ্টি, কসমেটিকসসহ অস্থায়ী খেলনার দোকান গড়ে উঠেছে।

৩০০ বছরের পুরোনো কাটাগড়ের মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজ

স্থানীয় কলিমাঝি গ্রামের বাসিন্দা এস এম মহব্বত জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রায় ৩০০ বছর ধরে এ মেলা চলে আসছে। আমার জন্মের আগে তো বটেই, আমার বাপ-দাদার জন্মের আগে থেকেই এ মেলা বসছে বলে মুরুব্বিদের মুখে শুনে আসছি।’

স্থানীয় বাসিন্দা ও বনমালীপুর জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী অলোক মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ‘মেলা শুরুর প্রায় একমাস আগে থেকে এলাকায় আমেজ সৃষ্টি হয়। মেলার সময় আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেওয়ার রীতি চালু রয়েছে। এলাকার চাকরিজীবী ও পেশাজীবীরা সারা বছর অপেক্ষায় থাকেন মেলায় গ্রামের বাড়িতে আসার জন্য। আশপাশের শতাধিক গ্রামের মানুষ কাজের জন্য যারা দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন, তারা মেলা উপলক্ষে বাড়িতে ছুটে আসেন।

৩০০ বছরের পুরোনো কাটাগড়ের মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজ

শেখর কাজী সিরাজুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, কাটাগড়ের মেলার প্রধান ঐতিহ্য হচ্ছে চিনির তৈরি সাজ-বাতাসা ও কদমা। মেলায় আগতরা মাটির পাতিলে (খুঠি) সাজ-বাতাসা ও কদমা কিনে বাড়ি ফেরেন। সেটি কেনার পরে আধ্যাত্মিক সাধক দেওয়ান শাহের (রহ.) আস্তানার ওপর ছিটিয়ে থাকেন। এভাবে প্রায় কয়েকশ মণ সাজ-বাতাসা ও কদমা ছিটানো হয়।

রুপাপাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মোল্লা বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও লাখো মানুষের ভিড় জমেছে মেলায়। সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে মেলা সমাপ্ত হবে বলে আশা করি।

৩০০ বছরের পুরোনো কাটাগড়ের মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজ

শেখর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল আহমেদ বলেন, কাটাগড়ের মেলা এ এলাকার ইতিহাস-ঐতিহ্যের একটি অংশ। মেলা ঘিরে আশপাশের কয়েকটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত গ্রামজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ।

কাটাগড় মেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মশিউল আজম বাবু মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, এ মেলা কমপক্ষে ৩০০ বছরের পুরোনো। মেলার শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কমিটির পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা থাকবে। এবারও লাখ লাখ মানুষ এ মেলায় সমবেত হবেন।

৩০০ বছরের পুরোনো কাটাগড়ের মেলা ঘিরে উৎসবের আমেজ

এ বিষয়ে বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অসামাজিক কার্যকলাপ ও অশ্লীলতা বন্ধে মেলা কমিটিকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এন কে বি নয়ন/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।