অসময়ে ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন, দিশেহারা মানুষ

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: ১০:৪৫ এএম, ২৬ মার্চ ২০২৪

কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলা দিয়ে বয়ে যাওয়া ব্রহ্মপুত্র নদে অসময়ের ভাঙনে দিশেহারা পাড়ের বাসিন্দারা। ক্রমে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় তা রোধ করা যাচ্ছে না। স্রোত অনেক কম থাকলেও ভাঙন দেখে হতবাক স্থানীয়রা। গত এক মাসে ব্রহ্মপুত্রের ব্যাপক ভাঙনে উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের দক্ষিণ নামাজের চর এলাকার বসতভিটা হারিয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে প্রায় আড়াই শতাধিক পরিবার। এখনও অনেক পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই পায়নি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় ২৫০ বসতবাড়ী এবং ৮০০ বিঘা ফসলি জমি নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে নামাজের চর পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, নামাজের চর মহাবিদ্যালয়, নামাজের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গুচ্ছগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুনামগঞ্জ (খেয়ার চর) বাজারসহ ফসলি জমি। ফলে ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে এলাকার মানুষ। অব্যাহত ভাঙন ঠেকাতে ব্যক্তি ও সামাজিক উদ্যোগে গাছের ডাল ও বস্তা ফেলে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দারা।

অসময়ে ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন, দিশেহারা মানুষ

তবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবার পদক্ষেপে আপদকালীন সময়ে ভাঙন কবলিত এলাকায় এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং কাজের পরিদর্শন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু, ভাইস চেয়ারম্যান আবু সাঈদ সরকার, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মতি শিউলী, ব্রহ্মপুত্র ভাঙন থেকে হাতিয়া ইউনিয়ন বাঁচাও কমটির সভাপতি বিএম আব্দুল ওহাব শাহসহ স্থানীয় নেতারা।

ভাঙন কবলিত এলাকার ববিতা খাতুন জানান, শুধুমাত্র বসতভিটা ও জমাজমি ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করতে বাড়ির সব কাজ ফেলে দিনরাত বস্তায় বালু ভর্তি করে নদীতে ফেলছি। এমনও দিন গেছে সারাদিন রোজা থেকে নদীর পাড়েই পানি দিয়ে ইফতার করেছি।

খেয়ার চর এলাকার হযরত আলী জানান, বাপ-দাদার জনমে দেখিনি অসময়ে এভাবে নদী ভাঙে। যেভাবে ভাঙছে তাতে শুকনো মৌসুমে ভাঙন ঠেকানো না গেলে খেয়ার চর বিলীন হওয়ার শংকা রয়েছে।

কৃষক আনছার আলী জানান, ৪৫ শতাংশ ভুট্টা, ৯ শতাংশ কচু খেত নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়াও বেগুন, মরিচ, লাউ, লাল শাকসহ বিভিন্ন সবজি খেত ভাঙনের কবলে। কিভাবে সন্তানের মুখে খাবার দেবে সেই চিন্তায় এখন দিন কাটছে।

সাহেবের আলগা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি বারি মোল্লা জানান, ব্রহ্মপুত্র ভাঙন রোধে এলাকাবাসী নিজ অর্থায়নে সেচ্ছাশ্রমে ১৪ হাজার বালু ভর্তি বস্তা নদীতে ফেলেছি। তবুও ভাঙন রোধ করা যাচ্ছে না।

অসময়ে ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন, দিশেহারা মানুষ

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম হোসেন মন্টু বলেন, এমপির উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ড এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। আশা করছি খুব দ্রুত ভাঙন স্থায়ীভাবে রোধে কাজ শুরু হবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভাঙন রোধে স্থানীয়দের সহযোগিতায় এক হাজার জিও ব্যাগ ডাম্পিং শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে আরও ফেলা হবে। চলতি সপ্তাহে টেন্ডারের ৮০০ মিটার কাজ শুরু হবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য সৌমেন্দ্র প্রসাদ পান্ডে গবা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাঙন রোধে সাড়ে ছয় কোটি টাকা বাজেট দিয়েছেন। যা টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। ভাঙন রোধে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে টেন্ডারে কাজ শুরু হবে।

ফজলুল করিম ফারাজী/এএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।