দিনাজপুর

রমজানের প্রথম শুক্রবারেই মুখরিত বউবাজার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুর
প্রকাশিত: ১১:০৭ এএম, ১৬ মার্চ ২০২৪

ঈদকে সামনে রেখে রমজানের প্রথম শুক্রবারেই দিনাজপুরে মুখরিত হয়ে ওঠে বউবাজার। রমজানের প্রথম শুক্রবার (১৫ মার্চ) নারীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে শহরের মালদহপট্টি, বাসুনিয়াপট্টি, গরুহাটি ও চুড়িপট্টির চারমুখী রাস্তায় বউবাজারে।

মূলত বউয়েরা বা নারীরা এই বাজারে কাপড়, দুল, চুরি, ভ্যানেটি ব্যাগ, স্যান্ডেল কিনতে আসেন বলেই মাত্র কয়েক ঘণ্টার এই বাজারের নাম রাখা হয়েছে বউবাজার। নারীদের কাছে কম দামে বিভিন্ন প্রকার কাপড় বিক্রি করেন দোকানিরা। সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলে এই বউবাজারের বেচাকেনা।

দিনাজপুর শহরের মালদহপট্টি, বাসুনিয়াপট্টি, গরুহাটি ও চুড়িপট্টির চারমুখী রাস্তা নিয়ে শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে এই বউবাজার। এই বাজারের শুরুটা হয়েছিল ১৩-১৪ বছর আগে মাত্র ৪টি দোকান নিয়ে। বর্তমানে ২৫০টির বেশি দোকান বসে বউবাজারে। মূলত শহরের বিভিন্ন কাপড়ের শো-রুমের কর্মচারীরা এই বউবাজারে দোকান দেন।

শুক্রবার বউবাজারে কাপড় কিনতে আসা বালুবাড়ী এলাকার গৃহবধূ নিলুফার ইয়াসমিন বলেন, বেশিরভাগ মেয়েই শুক্রবার এখানে পরিবার পরিজন নিয়ে কাপড় কিনতে আসেন। এখানে কাপড় যেমন সস্তায় পাওয়া যায়, তেমনি কাপড়ের মানও ভালো। অনেক দোকান থাকার কারণে নিজের পছন্দমতো যেকোনো কাপড় কিনতে পারি।

রমজানের প্রথম শুক্রবারেই মুখরিত বউবাজার

সুইহারী পিটিআই এলাকা থেকে বউ বাজারে এসেছিলেন তনুজা শারমিন। তিনি বলেন, প্রায় শুক্রবার তিনি এই বাজারে কাপড়সহ আনুসাঙ্গীক জিনিস কিনতে আসেন। কম দামে ভালো কাপড় পাওয়ায় নিজেরসহ পরিবারে জন্য কেনাকাটা করেছেন। ক্রেতারা সবাই নারী হওয়ায় কেনাকাটা করতে সুবিধা হয়।

বউ বাজার নামকরণের পেছনে কারণ জানতে চাইলে মালদহপট্টির স্থানীয় দোকানদার টুলু ইসলাম বলেন, ‘বউবাজার নামটা এসেছে মূলত এখানে প্রথমদিকে নতুন বউয়েরা কাপড় কিনতে আসতেন বলে। এখনো প্রতি শুক্রবার অনেক নতুন বউ কাপড় কিনতে আসেন। বর্তমানে এই বউবাজার এমন পরিচিতি পেয়েছে যে, ভিড়ের জন্য রাস্তা দিয়ে চলাচল করা মুশকিল হয়ে পড়ে।’

বউ বাজারের অস্থায়ী দোকানদার রেভা সরকার বলেন, আমরা এখানে নিয়মিত দোকান করি না। সপ্তাহে শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দোকান করেই চলে যাই। শুক্রবার মালদহপট্টির দোকানগুলো বন্ধ থাকে। এই বন্ধের দিনে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে এখানে দোকান দিই। বেচাবিক্রিও ভালোই হয়।

তিনি বলেন, ঈদের সময় বেচা কেনা অনেক বেড়ে যায়। গরিব পরিবারের পাশাপাশি অভিজাত এলাকার মা-বোনেরাও এখানে কেনাকাটা করতে আসেন।

বউ বাজারের দোকানি বাবু পদ্মার জানান, এখানকার দোকানীরা শহরের বড় কোনো না কোনো দোকানের কর্মচারী। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন শহরের সব দোকান বন্ধ থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাড়িতে বসে না থেকে বাড়তি আয়ের লক্ষ্যে কর্মচারীরা মিলে এই বউ বাজার দেওয়ার উদ্যোগ নেন ১৩-১৪ বছর আগে। তখন থেকে একই নিয়মে বউবাজার পরিচালনা হয়ে আসছে।

সরেজমিনে বউ বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন বয়সের নারী ও মেয়েদের উপচেপড়া ভিড়। বউ বাজারে মূলত ওয়ান পিস, টু পিস, থ্রি-পিস, থান কাপড়, টুকরা কাপড়, পুরুষদের শার্ট-প্যান্ট, শিশুদের পোষাক, জুতা স্যান্ডেল প্রসাধনীসহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় পাওয়া যায়।

রমজানের প্রথম শুক্রবারেই মুখরিত বউবাজার

বউবাজারে দিন দিন নারী দোকানীর সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে ৫০ জনের মতো নারী এই বাজারে দোকান করছেন। দোকানদার মিতু আক্তার বলেন, আমি মূলত মেয়েদের কাপড় বিক্রি করি। শুক্রবার সকাল থেকেই চলে আমাদের বিক্রি। এবার ঈদ উপলক্ষে বিক্রি ভালো হলেও গত দুই বছর করোনার কারণে ঈদে কম বিক্রি হয়েছে।

পাঞ্জাবি বিক্রেতা আল মিরাজ জানান, ঈদ উপলক্ষে বউ বাজারে মূলত রমজানের দ্বিতীয় শুক্রবার থেকে বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু এবার প্রথম শুক্রবারেই উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। প্রতি শুক্রবার তিনি ৮০ থেকে ৯০ পিস পাঞ্জাবি বিক্রি করেন।

বউবাজারের দোকান কর্মচারীর দপ্তর সম্পাদক বিমল আগারওয়াল বলেন, প্রথমে বউ বাজার ৪টি দোকান নিয়ে শুরু করেছিলাম আমরা। বর্তমানে এখানে ২৫০টির বেশি দোকান বসে। এখানে দোকান করতে হলে প্রথম দিকে ২০ টাকা করে চাঁদা দিতে হলেও বর্তমানে কোনো চাঁদা দিতে হয় না।

বড় বড় দোকান ও শপিংমলে বিক্রি হয় যে মানের পোশাকগুলো ঠিক সে মানের পোশাক ও কাপড় সস্তা দামে পাওয়া যায় ব্যতিক্রমধর্মী এই বউবাজারে। এখানকার দোকানিদের বড় দোকান ও শপিংমলের মতো খরচ না থাকায় একই মানের পোশাক সস্তায় বিক্রি করতে পারেন বলেও তিনি জানান।

এমদাদুল হক মিলন/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।