পথচারীদের ইফতারে ব্যতিক্রমী আয়োজন
পটুয়াখালী শহরের প্রাণকেন্দ্র ঝাউতলায় প্রতিদিন আসরের নামাজের পরপরই জড়ো হন একদল স্বেচ্ছাসেব। ফোর লেনের প্রশস্ত ওয়াকওয়েতে ত্রিপল বিছিয়ে দুই সারিতে রাখা হয় প্লেট, গ্নাস এবং পানির বোতল। ইফতারির জন্য এসব প্লেটে রাখা হয় বাহারি পদ। এগুলো প্রস্তুত করা হয় পথচারী ও অসহায় মানুষের ইফতারের জন্য। প্রতিদিন এভাবে কয়েকশ মানুষকে বিনামূল্য ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে পটুয়াখালীতে।
প্রথম রমজান থেকেই শুরু হওয়া এ ইফতারি কার্যক্রমের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইফতার খানা’। পটুয়াখালীর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পটুয়াখালী বাসী’ এ আয়োজন করছে। জেলার বিত্তবানদের সহযোগিতায় চলছে এ কার্যক্রম, যা চলবে শেষ রমজান পর্যন্ত। ইফতার করার পাশাপাশি এখানেই ওজু এবং জামাতে নামাজ পড়ারও ব্যবস্থা করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি। জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য রয়েছেন একজন ইমাম।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘পটুয়াখালী বাসী’র সভাপতি মাহমুদ হাসান রায়হান বলেন, গতবছরও আমরা এ কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। গতবছর কিছু টাকা বেঁচে গিয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে এবার প্রথম রোজায় ইফতারের কার্যক্রম শুরু করি। ইফতারিতে ১০টি পদ রাখা হয়। ছোলা, মুড়ি, পিঁয়াজু, জিলাপি, আলুর চপ, পেয়ারা, খেজুর, কলা, শরবত এবং মিনারেল ওয়াটার। একজনকে ইফতার করাতে ৯০ টাকা করে খরচ হচ্ছে। প্রথম দিনে ৫০ জনকে দিয়ে ইফতার খানা শুরু করলেও বর্তমানে প্রতিদিন ১০০ জনকে ইফতার করানো হচ্ছে।’
বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) বিকেলে ঝাউতলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে সারি সাড়ি অটোরিকশা, ভ্যানসহ সাইকেল স্ট্যান্ড করে রাখা হয়েছে। সবাই ইফতারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সেখানে কথা হয় অটোরিকশাচালক আলম গাজীর সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘কোনো হোটেলে ইফতার করতে গেলে কমপক্ষে ১০০ টাকা খরচ হয়। সারাদিন যা আয় করি তাতে ঠিকমতো সংসারের খরচই চালাইতে পারি না। হেরপর যদি একলা মানুষ ইফতার করতে ১০০ টাহা খরচ করি তয় পোলা পানেরে খাওয়ামু কী? পহেলা রমজান থেকে এই হানে ইফতার করি। রাস্তার পাশেই অটো রাখতে পারি। চোহের সামনে থাহে, চুরি হওয়ার ভয় নাই।’
এবছর পটুয়াখালী পৌরসভার পক্ষ থেকে এ ইফতার কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা করছে পটুয়াখালী পৌরসভা। পৌরসভার পক্ষ থেকে মুসল্লিদের ওজু করার জন্য বেশকিছু পানির ট্যাপ স্থাপন করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বসানো হয়েছে অস্থায়ী ডাস্টবিন।
পটুয়াখালী পৌরসভার মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ বলেন, ‘গতবছরও আমি বেশ কয়েকদিন ইফতারের ব্যবস্থা করেছি। এবারও সার্বিক সহযোগিতা করবো। যেদিন কোনো ডোনার থাকবে না সেদিন আমার পক্ষ থেকে ইফতারের অয়োজন করা হবে।’
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ইফতার পার্টি আয়োজন না করার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করেছেন, সে কারণে অসহায় মানুষদের নিয়েই এবার ইফতার কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।’
আব্দুস সালাম আরিফ/এসআর/এএসএম