বাবা মারা যান প্রবাসে, পরিবারের হাল ধরা ছেলের মৃত্যু অগ্নিকাণ্ডে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৬:০৪ পিএম, ১৪ মার্চ ২০২৪

সংসারে একটু সচ্ছলতার আশায় তিন বছর আগে দালালের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কাঁঠালবাড়ি গ্রামের দরিদ্র দিনমজুর আবু বক্কর মিয়া (৫০)। তবে ভাগ্য সহায় হয়নি। তিনমাস কাজের আশায় লুকিয়ে থেকে জীবনযুদ্ধে হার মেনে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। এরপর সংসারের হাল ধরেছিলেন বড় ছেলে ইকবাল হোসেন (২৫)।

বাবার ধারদেনা পরিশোধ ও পরিবারের খরচ মেটাতে ইকবাল চাকরি নেন মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরে জেকে প্লাস্টিক কারখানায়। গত ৭ মার্চ দিবাগত রাতে ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হন ইকবাল, ইকবালের খালাতো বোনের স্বামী রিয়াজুল ইসলাম (৩৮), ইকবালের চাচাতো ভাই রাকিব হোসেন (২৬) ও মতিউর রহমান (৩৩) নামের আরেক যুবক।

পরদিন দুপুরে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিয়াজুল। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দিবাগত রাতে ইকবালের মৃত্যু হয়। বাকি দুজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যে মতিউর কুড়িগ্রামের তাঁতিপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

ইকবাল হোসেনের মৃত্যুতে তার পরিবারে নেমে এসেছে আঁধার। ছেলেকে হারিয়ে মা সবুরন বেগম (৪৫) আর স্বামীকে হারিয়ে স্ত্রী যুথি আক্তার (২২) এখন দিশেহারা। কেননা পরিবারটিতে একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন ইকবাল।

নিহতের মামা গোলাম হায়দার বলেন, ‘আমার দুলাভাই খুবই গরিব ছিলেন। অবৈধপথে বিদেশে গিয়ে মারা যান। তারপর আমার ভাগনে পরিবারের হাল ধরে। কিন্তু সেও আজ লাশ হয়ে ফিরে এলো।’

তিনি বলেন, ‘দুই বছর আগে ইকবালের বিয়ে হয়েছিল। পাঁচ মাস আগে একটি ছেলে হয়েছে ঘর আলো করে। বাড়িতে মধ্যবয়সী মা-ও রয়েছে। উপার্জনক্ষম পুরুষকে হারিয়ে পরিবারটি এখন মানবেতর জীবনযাপন করছে।’

এদিকে, বুধবার (১৩ মার্চ) সকালে ইকবাল হোসেনের মরদেহ বাড়িতে আনা হলে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

ইকবালের মামা গোলাম হায়দার বলেন, ‘চিন্তা করছি ওদের সংসারটা কীভাবে চলবে? এখন কে নেবে তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানের দায়িত্ব?’

স্থানীয় গট্টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান লাবলু বলেন, পরিবারটি খুবই অসহায়। ইকবালের করুণ মৃত্যু পরিবারটিকে একেবারেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতে ঠেলে দিলো।

এসময় পরিবারটিকে ভিজিডি কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া ও ব্যক্তিগতভাবে কিছু সহায়তার আশ্বাস দেন তিনি।

এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আনিসুর রহমান বালী বলেন, পরিবারটির ব্যাপারে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। খুব শিগগির তাদের নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। পরিবারটির উপার্জনের বিষয়টিও দেখা হবে।

এন কে বি নয়ন/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।