স্কুলছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

মামলা না নেওয়ায় ওসির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নাটোর
প্রকাশিত: ০৯:৪৯ এএম, ১১ মার্চ ২০২৪
বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খান

নাটোরের বড়াইগ্রামে দশম শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ছয়জন মিলে পালাক্রমে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের ঘটনায় ওসির বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রোববার (১০ মার্চ) পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস.) শরিফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্যরা হলেন, বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরিফ আল রাজীব ও ডিস্ট্রিক্ট ইনটেলিজেন্ট অফিসার (ডিআইওয়ান) জালাল উদ্দিন। তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যেই তদন্ত প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, গত ২৭ জানুয়ারি বিকেলে পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীকে কৌশলে ডেকে নেন পার্শ্ববর্তী বড়াইগ্রামের আটঘরিয়া গ্রামের পারভেজ হোসেন। পথে নির্জন রাস্তায় পূর্ব পরিকল্পনা মাফিক পারভেজসহ আগে থেকেই অপেক্ষমান তার ৫ বন্ধু সাগর, মোহন, প্রসনজিৎ, জিত ও কৃষ্ণ মিলে স্কুলছাত্রীকে মুখ চেপে পেয়ারা বাগানে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করেন। পরে কাউকে ঘটনাটি জানালে ধর্ষণের ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়াসহ হত্যার হুমকি দিয়ে অভিযুক্তরা চলে যান।

পরবর্তীতে স্থানীয়রা মেয়েটিকে উদ্ধার করে বাড়িতে পৌঁছে দেন। পরে গুরুতর অসুস্থ স্কুলছাত্রীকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খান মামলা না নিয়ে তাদের পাঠিয়ে দেন ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবরের কাছে। ওসির কথামতো সেখানে কয়েক দফায় আপস মীমাংসার চেষ্টা করা হয়। এরইমধ্যে মীমাংসার আশ্বাস, ওসি ও প্রভাবশালীদের দৌরাত্মে দিশেহারা হয়ে পড়ে নির্যাতিতার পরিবার। কেটে যায় আরও বেশ কিছুদিন।

মামলা না নিয়ে আপস মীমাংসায় ওসির অপতৎপরতার কথা উঠে আসে নির্যাতিতার স্বজন ও জনপ্রতিনিধির কথায়। তবে নিজের প্রতি সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন ওসি।

ভুক্তভোগী মেয়েটির বাবা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, থানায় গিয়ে তার মেয়ের ওপর নির্মম নির্যাতনের কথা বলতেই ওসি বলেন, ‘এটা কোনো বিষয় না। মামলা নেওয়া যাবে না। আপনারা চলে যান।’

তিনি বলেন, ওসির এই কথায় চিন্তায় পড়ে যাই। শেষে ওসির কথামতো চেয়ারম্যানের কাছে গেলাম। চেয়ারম্যানও কোনো সমাধান দিতে পারলো না। পরে কোর্টে গিয়ে মামলা করি।

ভুক্তভোগীর ভগ্নিপতি জানান, থানায় মামলা করতে গেলে ওসি বলেন এটা কোনো বিষয়ই না। তারপর চেয়ারম্যানের কাছে যেতে বলে ধমক দিয়ে বের করে দেন ওসি।

জোয়ারী ইউপি চেয়ারম্যান আলী আকবর জানান, ওসি ফোনে তাকে দুইপক্ষকে নিয়ে বসে ধর্ষণের বিষয়টি মীমাংসা করে দিতে বলেন। ওসির কথামতো তিনি বাদী বিবাদীকে নিয়ে কয়েক দফা বসেও বিষয়টি সমাধান করতে না পেরে ভুক্তভোগীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে বলেন।

তবে বড়াইগ্রাম থানার ওসি শফিউল আজম খান সকল অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ধর্ষণের ঘটনায় কেউ থানায় মামলা করতে আসেনি। বার বার ভুক্তভোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও মামলা করাতে পারেনি পুলিশ। চেয়ারম্যানকে দিয়ে আপস মীমাংসার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।

এ ঘটনায় এলাকায় গিয়ে অভিযুক্তদের কাউকেই পাওয়া যায়নি। গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে গা ঢাকা দেন তাদের স্বজনরাও। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছেন স্থানীয়রা।

নাটোরের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম জানান, দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় মামলা না নেওয়াসহ পুলিশের কারো কোনো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে কোথাও বিচার না পেয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি আদালতের স্মরণাপন্ন হন ভুক্তভোগীরা। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্ত করতে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

এ ব্যাপারে পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার শরীফ উদ্দিন জানান, আদালতের নির্দেশনার কপি হাতে পেয়েছেন। এরইমধ্যে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

রেজাউল করিম রেজা/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।