করোনা বদলে দিয়েছে বর্নীর সংসার

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি দিনাজপুর
প্রকাশিত: ০৬:২৭ পিএম, ০৯ মার্চ ২০২৪

নাহার বর্নী দিনাজপুর শহরের পুরাতন বাহাদুর বাজারের বাসিন্দা। মহামরি করোনার কারণে অনেকেই যখন চাকরি হারিয়ে দিশেহারা তখন তিনি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন উদ্যোক্তা হওয়ারা। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। পাশাপাশি শতাধিক নারীকে বানিয়েছেন উদ্যেক্তা। বলা চলে করোনা বদলে দিয়েছে উদ্যোক্তা নাহার বর্নীর জীবন।

তবে শুরুর সময়টা যে সুখকর ছিল না তা জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপের শুরুতেই জানান বর্নী।

করোনা বদলে দিয়েছে বর্নীর সংসার

তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে এসএসসি ও ২০০১ এইচএসসি পাশের পর বিয়ে স্বামী সংসার, বাচ্চা নিয়েই বেশ সময় কাটছিল। বাচ্চাদের লেখাপড়া আর সংসার ছাড়া নিজেকে নিয়ে ভাবার তেমন সুযোগ, সময় ছিল না। তবে ২০১০ সালে ঢাকায় একবার বেকিং ট্রেনিং করেছিলেন। সেই সুবাদে প্রায় সময় ছেলে মেয়ে আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুদের জন্য বাড়িতে (হোমমেড) কেক তৈরি করতেন। পাশাপাশি ছিল নতুন নতুন আইটেমের রান্না করার নেশা।

এরই মধ্যে ২০২০ সালে করোনার সময় সবাই যখন ঘরবন্দী, ছেলে মেয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রাইভেট কোচিং বন্ধ। তখন ভাবতে শুরু করি- অবসর সময়ে নিজে কিছু করা যায় কি-না। হঠাৎ মাথায় এলো সেই ২০১০ সালে নেয়া বেকিং ট্রেনিং কাজে লাগানোর পরিকল্পনা। সেই ভাবনা থেকেই টুকটাক কেক বানানো ছবি তোলা নাহার কিচেন আইডিতে ছবি পোস্ট করা। ধীরে ধীরে সাড়া পেতে শুরু করি। পাশাপাশি দিনাজপুরের মানুষ হোমমেড শব্দটির সঙ্গে পরিচিত হতে শুরু করলো। কিন্তু একজন নিকট আত্মীয় ছাড়া সবাই বলতে লাগলেন কি শুরু করেছো, দিনাজপুরের মানুষ হোমমেড শব্দটির সঙ্গেই যেখানে পরিচিত নন, সেখানে অনলাইনে কেক বিক্রি কি করে সম্ভব, এটা পাগলামি ছাড়া কিছুই নয়। কিন্তু হাল ছাড়িনি। এখন অনলাইনে কেক অর্ডার নিয়ে সরবরাহ ও বেকিং ট্রেনিং দিয়ে মাসে আয় হচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার টাকা।

করোনা বদলে দিয়েছে বর্নীর সংসার

নাহার বর্নী বলেন, বর্তমান দ্রব্য মূল্যের বাজারে পুরুষের একার আয় দিয়ে ছেলে মেয়েদের পড়ালেখা এবং সংসার চালানো খুবই কঠিন। তাই নারীরা যদি কিছু সময় বের করে কোনো না কোনো হোমমেড আইটেম (বাসায় তৈরি) নিয়ে কাজ করেন তাহলে কিছুটা হলেও সফলতা আসবে। আর সফলতা মানেই কিছুটা হলেও আয় করা, যা সংসারের কাজে লাগবে। আমি যখন শুরু করি তখন সবাই আমাকে বলেছিল কি পাগলামি শুরু করেছি। এখন সফলতা দেখে পরিবার তো বটেই, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব সবাই বলে আমরা তোমার সঙ্গে আছি এগিয়ে যাও। আমাকে দেখে দিনাজপুর শহরে অন্তত ১০০ নারী উদ্যোক্তা তৈরি হয়েছে। যারা সবাই কোনো নো কোনো হোমমেড আইটেম নিয়ে কাজ করছেন। দিন দিন চহাহিদাও বাড়ছে। নারীরাও ট্রেনিং নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, কেক বলতে আগে মানুষ বেকারিকেই বেছে নিত। ধারণা ছিল কেক বেকারিতেই পাওয়া যায়। কিন্তু এখন অনলাইনে অর্ডার দিচ্ছে। তাই আগামীতে হোমমেড কেক সহজলভ্য করতে দিনাজপুর শহরে একটি কেকসোপ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেন পুরো কেক নয় একপিচ কেক কিনেও মানুষ বসে খেতে পারেন। এতে করে নারীদের কর্মসংস্থানও তৈরি হবে।

করোনা বদলে দিয়েছে বর্নীর সংসার

তিনি আরও বলেন, আগে কেক তৈরির কাঁচা মাল দিনাজপুরে পাওয়া যেত না। এখন আনলাইনে এমন কি অফলাইনেও দিনাজপুরেই কেক তৈরির সব সামগ্রী পাাওয়া যায়। তিনি উদ্যোক্তাদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকারের পৃষ্টপোষকতা গুলোকে সহজিকরণের দাবি জানান। সেই সঙ্গে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে নতুন নতুন প্লাটফোর্ম তৈরির প্রতিও জোর দেন।

বিসিক দিনাজপুর জেলা কার্যালয়ের উপ মহাব্যবস্থাপক মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, হোমমেড নিয়ে কাজ করা নারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। হোমমেডের চাহিদাও বাড়ছে। জেলায় যে কয়জন নারী উদ্যোক্তা হোমমেড নিয়ে কাজ করছেন তাদের মধ্যে নাহার বর্নী অন্যতম। তিনি উদ্যোক্তাও তৈরি করছেন। আমরাও কাজ করছি কিভাবে তাদের জন্য এই কাজটি আরও সহজিকরণ করা যায়।

এমদাদুল হক মিলন/এএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।