শিক্ষার্থীশূন্য বিদ্যালয়ে আড্ডায় সময় কাটান শিক্ষকরা

নাসিম উদ্দিন নাসিম উদ্দিন , জেলা প্রতিনিধি, জামালপুর জামালপুর
প্রকাশিত: ০৫:১৫ পিএম, ০৫ মার্চ ২০২৪

জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে চাপারকোনা মনিজা আবুল কালাম উচ্চ বিদ্যালয়ে কাগজে-কলমে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলেও বাস্তবে কোনো শিক্ষার্থী নেই। ফলে আড্ডা দিয়েই সময় পার করেন শিক্ষকরা। উপজেলার ডোয়াইল ইউনিয়নের চাপারকোনো এলাকায় অবস্থিত ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সালে এলাকার কিছু শিক্ষানুরাগী নিজস্ব জমি ও অর্থায়নে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯৯৭ সালে ১২ জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়ে বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হয়। এরপর তিনজন শিক্ষক অবসরে যান। বর্তমানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৯ জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রতিটি শ্রেণিকক্ষই শূন্য। শ্রেণিকক্ষের বেঞ্চগুলো দীর্ঘদিন ব্যবহৃত না হওয়ায় ধুলাবালির আস্তরণ পড়ে রয়েছে। অফিস কক্ষে নেই প্রধান শিক্ষক। সহকারী শিক্ষকরাও কর্মচারীদের নিয়ে স্কুলমাঠে বসে খোশগল্পে মেতেছেন।

তবে শিক্ষার্থী না থাকলেও হাজিরা খাতায় সন্তোষজনক উপস্থিতি লিখে রাখা হয়েছে।

শিক্ষার্থীশূন্য বিদ্যালয়ে আড্ডায় সময় কাটান শিক্ষকরা

বিদ্যালয়ের পাশেই হাছেন আলীর বাড়ি। চোখের সামনে প্রতিষ্ঠানটির এমন অবস্থা দেখে তিনি বলেন, স্কুলের শিক্ষকরা প্রতিদিন স্কুলে আসেন আর চেয়ার নিয়ে মাঠে বসে পেপার পড়ে ও গল্প করে সময় পার করেন। মাঝে মধ্যে দুই চারজন শিক্ষার্থী স্কুলে এলেও তাদের ঠিকমতো ক্লাস নেওয়া হয় না। শিক্ষার্থীরা দুই এক ঘণ্টা গল্প করে সময় কাটিয়ে বাড়ি চলে যায়।

কলেজছাত্র সাকিব হাসান, খোকনসহ আরও অনেকে বলেন, বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীশূন্য, অথচ এ বিষয়ে কখনো কোনো শিক্ষকের মাঝে উদ্বেগ লক্ষ্য করা যায়নি। মূলত শিক্ষকদের অবহেলার কারণেই আজ বিদ্যালয়টি ধ্বংসের পথে।

বিদ্যালয়ের জমিদাতা মৃত খুশ মাহমুদ সরকারের ছেলে সরোয়ার আলম বলেন, এই প্রতিষ্ঠানে আমরা এক বিঘা জমিদান করেছি। শিক্ষকদের অবহেলায় আজ বিদ্যালয়টি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এজন্য আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকেই দায়ী করবো। এছাড়া শিক্ষার্থীশূন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষক কর্মচারীরা কীভাবে বেতন ভাতা উত্তোলন করে, সেটা কি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার দেখেন না?

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জহুরুল ইসলাম মানিক বলেন, শিক্ষকরা যদি নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে না আসেন, শিক্ষার্থীদের পাঠদান না করান, সেটি দেখার দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকের। তিনি কখনোই আমাকে এ বিষয়ে অবগত করেননি। বিষয়টি আমি জানলাম এবং দেখবো।

এ বিষয়ে চাপারকোনা মনিজা আবুল কালাম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজমেরী বেগম বলেন, আমি বিদ্যালয়ে নেই বলেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম। সহকারী শিক্ষকরা নিয়মিত স্কুলে আসেন এবং পাঠদান করান। তবে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতি খুবই কম। এটি উন্নত করার চেষ্টা চলছে।

সরিষাবাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের এমন বেহাল দশা, এটি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন আক্তার বলেন, বিষয়টি আমি শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে খতিয়ে দেখবো এবং সত্যিকার অর্থেই যদি শিক্ষার্থীশূন্য হয় তাহলে বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।