মালিকের পিছু ছাড়ে না রাজহাঁস

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ১২:৫৭ পিএম, ০৫ মার্চ ২০২৪
লিটন হোসেনের পিছু ছাড়ে না রাজহাঁসটি

মানুষের সঙ্গে কুকুর, বিড়াল বা পোষা পাখির বন্ধুত্ব আমরা দেখেছি। তবে রাজহাঁসকে কখনো কি দেখেছেন এভাবে মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে? শুনতে অবাক লাগলেও এমনই ঘটনা ঘটেছে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বালিঘাটা ইউনিয়নের আটুল মধ্যপাড়া গ্রামে। ওই গ্রামের বাসিন্দা লিটনের পিছু ছাড়ে না একটি রাজহাঁস। তিনি যেখানেই যান তার পিছু পিছু ছুটে চলে হাঁসটি।

লিটন হোসেন পেশায় একজন কৃষক। তিনি এক ছেলে (১৪) ও এক মেয়ের (৮) বাবা। তিনি যেখানেই যান সেখানেই তার পেছনে পেছনে রাজহাঁসটিও চলে যায়। অনেক মানুষের ভিড়েও রাজহাঁসটি তার মালিক লিটন হোসেনকে খুঁজে নেয়।

লিটন হোসেনের পিছু ছাড়ে না রাজহাঁসটি

সম্প্রতি লিটন হোসেনের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেলো, তার বাড়ির সামনে কয়েকজন মানুষ জড়ো হয়েছেন। লিটন বাড়ির দরজা খুলে বাইরে আসেন। কিছুক্ষণ পর একটি রাজহাঁস বাড়ি থেকে বের হয়। লিটন হোসেন মাঠের দিকে যাচ্ছিলেন। রাজহাঁসটিও তাকে অনুসরণ করে পেছনে পেছনে ছুটতে লাগলো। তিনি যখন মাঠ থেকে বাড়িতে ফিরছিলেন, তখনো দেখা গেলো রাজহাঁসটিও তার সঙ্গে আসছে। এক ব্যক্তি পরীক্ষা করতে রাজহাঁসটিকে খাবার দিয়ে তার দিকে ডাকছিলেন। কিন্তু প্রাণীটি তার মালিক লিটনের দিকেই ছুটে যায়।

লিটন হোসেন বলেন, ‘এক বছর আগে এক হাজার ২০০ টাকায় প্রতিবেশীর কাছে চারটি রাজহাঁসের বাচ্চা কিনেছিলাম। একটি বাচ্চা মারা যায়। একটি গাবড়া (বনবিড়াল) খেয়েছে। বাকি দুটির মধ্যে একটি জবাই করে খাওয়া হয়। আমি নিজেই অবশিষ্ট রাজহাঁসটিতে নিয়মিত খাবার দিচ্ছিলাম। সেখান থেকে আমার সঙ্গে তার সখ্য গড়ে ওঠে। বিগত ছয় মাস ধরে যেখানে যাই রাজহাঁসও আমার পেছনে পেছনে আসে। অনেক চেষ্টা করেও সঙ্গ ছাড়াতে পারিনি।’

তিনি বলেন, ‘যখন বাজারে যাই আমার পিছু নেই রাজহাঁস। এ কারণে তার মায়ায় পড়ে গেছি। রাজহাঁসটি কয়েকবার জবাই করে খাওয়ার উদ্যোগ নিয়েও জবাই করতে পারিনি। এখন ভাবছি রাজহাঁসটিকে কাছেই রেখে দেবো।’

‘এখন প্রতিদিন রাজহাঁসটিকে দেখতে লোকজন আমার বাড়িতে আসছে। যখন দূরে কোথাও যাই তখন এটিকে বেঁধে রাখি। বাড়িতে আসার পর আমার কথা শোনার পর সে সাড়া দেয়’, যোগ করেন রাজহাঁসটির মালিক লিটন হোসেন।

লিটন হোসেনের স্ত্রী ছোবেদা খাতুন বলেন, ‘আমরা পরিবারের সবাই রাজহাঁসটিকে খাবার দিই। কিন্তু সে আমাদের কাছে আসে না, আমার স্বামীর ভক্ত। এর কারণে সাংসারিক কাজের কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে। তারপরও রাজহাঁসটির এমন আচরণে আমরা সবাই মুগ্ধ।’

লিটন হোসেনের পিছু ছাড়ে না রাজহাঁসটি

কথা হয় লিটনের প্রতিবেশী জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ৩-৪ মাস ধরে দেখছি রাজহাঁসটি লিটনের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করে। তিনি যেখানেই যান হাঁসটি তাকে অনুসরণ করে। এমন মালিকভক্ত রাজহাঁস এলাকায় আগে কখনো দেখিনি।’

আরেক প্রতিবেশী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা অনেক পরীক্ষা করে দেখেছি আসলেই রাজহাঁসটি তার মালিককে চেনে। ভিড়ের মধ্যেও লিটনকে চিনে পাশে এসে দাঁড়িয়ে থাকে। সেখান থেকে লিটন চলে গেলে রাজহাঁসটিও পেছনে পেছনে চলে যায়।’

পাঁচবিবি পৌরশহরের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক সুমন চৌধুরী বলেন, রাজহাঁস ও মানুষের এমন সখ্য সত্যিই অবাক করার মতো। এটি দেখে খুব ভালো লাগে।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।