মিয়ানমারে সংঘাতে রোহিঙ্গাদের ওপর হামলা বন্ধের দাবি
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও আরাকান আর্মির (এএ) মধ্যে চলমান সংঘাতে সেখানে বসবাসরত রোহিঙ্গা নিহত, আহত ও অপহরণের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে উখিয়া-টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা এফডিএমএন প্রতিনিধি কমিটি।
রোববার (৩ মার্চ) বিষয়টি নিশ্চিত করেন উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্প মাঝি (নেতা) মাস্টার মুসা।
রোহিঙ্গা এফডিএমএন প্রতিনিধি কমিটি পক্ষ থেকে মাস্টার মুসা বলেন, আরাকানে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে রাখাইন বিদ্রোহী গোষ্ঠী (আরাকান আর্মি) ও সামরিক জান্তা দ্বারা সংঘটিত গণহত্যার ক্রমাগত কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানাই। মিয়ানমারে বসবাস করা রোহিঙ্গারা অযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও বিদ্রোহীরা রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। তাদের সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে গেছেন রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গারা। তারা হচ্ছেন লক্ষ্যবস্তু। এই অর্থহীন যুদ্ধের ফলে রোহিঙ্গাদের প্রাণহানি, মর্মান্তিক ক্ষতি, বাড়িঘরসহ গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক তাদের ঘর থেকে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে।
রাখাইনে চলমান সংঘাতে ১ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হতাহতদের তথ্য নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৪০ জন রোহিঙ্গা নিহত, ১০৮ জন আহত এবং চারজন অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে জানায় রোহিঙ্গা এফডিএমএন প্রতিনিধি কমিটি।
এদিকে শনিবার (২ মার্চ) সকাল থেকে টেকনাফ পৌরসভা, হ্নীলা ও হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইনে ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে। রাতে ও সকালে মর্টার শেল ও গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে দাবি করেন হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী।
তিনি বলেন, ‘শনিবার রাতে ও সকাল ১০টার পর্যন্ত থেমে থেমে ওপারে মিয়ানমার থেকে ভারী মর্টার শেল ও গুলির ফায়ারের শব্দ শুনতে পাই। সকাল থেকে সেখানে ধোঁয়া উড়ছে দেখা যাচ্ছে।’
স্থানীয় রশিদ আমিন নামের এক জেলে বলেন, টেকনাফ পৌরসভা, শাহপরীর দ্বীপ, হোয়াইক্যং ও হ্নীলা সীমান্তের পূর্বে মিয়ানমারের আকিয়াব ও মোংডু শহরের কাছাকাছি গ্রাম কুমিরহালি, নাইচদং, কোয়াংচিগং, শিলখালী, নাফপুরা গ্রামে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সংঘর্ষ চলছে।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ নুর আহমদ আনোয়ারি বলেন, ওপারে চলা সংঘাতের কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতে সীমান্তের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে। ওপারের পরিস্থিতির কারণে বিজিবি, কোস্ট গার্ড ও পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে কোস্ট গার্ড চট্টগ্রাম পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট তাহসিন রহমান বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের আশঙ্কায় নাফ নদীতে কোস্ট গার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না।
সায়ীদ আলমগীর/এসআর/জিকেএস