থানায় যুবককে পেটানোর অভিযোগে এসআই ক্লোজড
নোয়াখালীর সেনবাগ থানায় বিনা কারণে যুবককে পিটিয়ে আহত করার দায়ে সঞ্জয় সিকদার নামের পুলিশের এক উপ-পরিদর্শককে (এসআই) প্রত্যাহার (ক্লোজ) করা হয়েছে।
শুক্রবার (১ মার্চ) নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহীম বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, প্রশাসনিক কারণে সেনবাগ থানার এসআই সঞ্জয় সিকদারকে পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিধি মোতাবেক পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কমিটির সদস্যরা হলেন আহ্বায়ক নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বেগমগঞ্জ সার্কেল) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজুব, সদস্য সেনবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হেলাল উদ্দিন ও সদর সার্কল অফিসের পরিদর্শক আবু শাহেদ খান। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে থানায় পুলিশের হাতে আটক বড় ভাইকে দেখতে গিয়ে মারধরের শিকার হন আবদুল্লাহ আল নোমান (২২) নামের এক যুবক। তার অভিযোগ, বড় ভাইকে কেন আটক করা হয়েছে জানতে চাওয়ায় তাকে থানার একটি কক্ষে আটকে পিটিয়ে আহত করেন এসআই সঞ্জয় সিকদার।
ভুক্তভোগী আবদুল্লাহ আল নোমান সেনবাগ উপজেলার কাদরা ইউনিয়নের উত্তর কাদরা গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে। তিনি বর্তমানে ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
নোমান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি সেনবাগ বাজারে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে চাকরি করি। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেনবাগ থানার এসআই সঞ্জয় সিকদারসহ একদল পুলিশ বিনা অপরাধে কাদরা মজুমদার বাড়ির পাশ থেকে আমার বড় ভাই শাহাদাত হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। বিষয়টি শুনে আমি দুপুরে থানায় গিয়ে এক কনস্টেবলের কাছে জানতে চাই কেন আমার ভাইকে আটক করা হয়েছে। তখন পাশের কক্ষে থাকা এসআই সঞ্জয় ওই কনস্টেবলকে দিয়ে আমাকে ডেকে থানার একটি কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে দরজা বন্ধ করে আমাকে আছাড় মেরে মেঝেতে ফেলে দেন সঞ্জয়। এরপর লাথি ও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেন। এতে অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ সদস্যরা আমাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। বিনা অপরাধে কেন আমার ভাইকে আটক এবং আমাকে অমানবিকভাবে পিটিয়ে আহত করা হলো, তার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষী পুলিশ কর্মকর্তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাই।’
তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে নোমানের সঙ্গে দেখাই হয়নি বলে দাবি করেন এসআই সঞ্জয় সিকদার। তিনি দাবি করেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মজুমদার বাড়ির পাশ থেকে ২০০ গ্রাম গাঁজাসহ শাহাদাত ও আবদুস সাত্তারকে আটক করা হয়। এরপর নিয়ম অনুসারে তাদের থানায় আনা হয়েছে। শাহাদাতের ভাই নোমানের সঙ্গে তার দেখা কিংবা কথাই হয়নি। আটকের সময় তিনি (নোমান) ঘটনাস্থলে ছিলেন কি না তাও তার জানা নেই। মারধর ও হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি মিথ্যা।
সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক নাঈম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর ১টার দিকে ওয়াকিটকিসহ সাদা পোশাকের এক পুলিশ সদস্য আবদুল্লাহ আল নোমানকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। নোমানের বুকে ও পিঠে জখম রয়েছে। তিনি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তাকে অক্সিজেন দিয়ে হাসপাতালে রাখা হলেও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এ বিষয়ে সেনবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজিম উদ্দিন বলেন, গাঁজাসহ এক যুবককে আটকের পর তার ভাই থানায় এসে ঝামেলা করেছিলেন। তখন তাকে হাজতে ঢোকানোর কথা বললে দৌড় দেন। এসময় সিঁড়িতে পড়ে ব্যথা পেয়েছেন। তাকে কেউ মারধর করেননি।
জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজমুল হাসান রাজিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইকবাল হোসেন মজনু/এসআর/এএসএম