কিস্তির টাকা না পেয়ে ঘরে তালা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ০৯:৩১ এএম, ০১ মার্চ ২০২৪

গাজীপুরের শ্রীপুরে এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় ঋণগ্রহীতার ঘরে তালা দিয়েছেন আম্বালা ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এখন তিন সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হচ্ছে ওই পরিবারকে।

বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ঘরে তালা লাগানোর বিষয়টি জানতে পারেন ঋণগ্রহীতা। এরআগে বুধবার বিকেলে শ্রীপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের চন্নাপাড়া গ্রামের ফকির বাড়ি জামে মসজিদ এলাকার বাসের সুপারভাইজার আলা উদ্দিন ও পোশাক শ্রমিক শামীমা আক্তারের ঘরে তালা লাগায় ওই প্রতিষ্ঠানটি।

ঋণগ্রহীতা শামীমা আক্তার (২৮) ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার বৈলর ইউনিয়নের দেওয়ানিবাড়ি গ্রামের মো. আলা উদ্দিনের স্ত্রী। প্রায় ২০-২২ বছর আগে স্বামী আলা উদ্দিনের বাবা আবুল বাশার শ্রীপুরের চন্নাপাড়া গ্রামে জমি কিনে বাড়িতে বসবাস করে আসছেন। শামীমা পার্শ্ববর্তী ভিনটেজ ডেনিম লিমিটেড নামের একটি তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে অপারেটর পদে চাকরি করতেন। সম্প্রতি তিনি চাকরি হারিয়েছেন। স্বামী আলা উদ্দিন এনা পরিবহন বাসের সুপারভাইজার পদে কাজ করেন।

শামীমা আক্তার জানান, গত বছরের মে-জুন মাসে মাসিক ৯ হাজার ৫০০ টাকা কিস্তিতে আম্বালা ফাউন্ডেশনের শ্রীপুর শাখা থেকে ১ লাখ টাকা ঋণ নেন তিনি। ঋণের টাকায় সাবলম্বী হতে চেয়েছিলেন তিনি। প্রতি মাসেই যথাসময়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করে আসছিলেন। জানুয়ারি মাসে চাকরি হারিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হন। অপরদিকে তার শাশুড়ি অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সংসারে সন্তানদের পড়ালেখার খরচ, অসুস্থ শাশুড়ির চিকিৎসা সব মিলিয়ে চাকরি হারিয়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারেননি তিনি।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাশুড়িকে দেখতে ঘরে তালা দিয়ে যান। বৃহস্পতিবার বিকেলে ফিরে এসে ঘরের দরজায় দুইটি তালা দেখতে পেলে প্রতিবেশীরা এনজিও কর্মীরা তালা লাগিয়েছেন বলে জানান।

শামীমা বলেন, আমি যখন ১ লাখ টাকা ঋণ নিই, তখন আমাকে ৩২ হাজার নগদ টাকায় বাধ্যতামূলকভাবে একটি সেলাই মেশিন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে ঋণ বাবদ যাবতীয় খরচ ও সঞ্চয় বাদে আমাকে ১ লাখ টাকার স্থলে মাত্র ৫৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। আমি তখন সেলাই মেশিন না নিতে চাইলে আমাকে ঋণ দেওয়া হবে না বলে জানায়। আমি ওই টাকায় একটি অটোরিকশা কিনে পরিচালনা করছি। প্রতি মাসের প্রথম বুধবার কিস্তি পরিশোধের কথা, আমার মাত্র এক মাস কিস্তির টাকা বকেয়া পড়েছে, তাই তারা (এনজিও কর্মীরা) আমার ঘরে তালা লাগিয়েছে। আমার যদি চাকরিটা না যেতো তাহলে ঋণের টাকা বকেয়া পড়তো না, খেয়ে না খেয়ে আগে ঋণের টাকা পরিশোধ করেছি। আমি এখন আমার তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে ঘরের সামনে অপেক্ষা করছি। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তারা বলে ‘আমরাও কিস্তির জন্য আপনার ঘরের সামনে গিয়ে বসে থাকি আমাদের খুব কষ্ট হয়। এখন বুঝেন আমাদের কেমন লাগে’।

শামীমার স্বামী আলা উদ্দিন বলেন, দুই জনের আয়ে মা-বাবা ও সন্তান নিয়ে কোনোমতো চলতে হয়। এর মধ্যে মা অসুস্থ হয়ে পড়ায় এ মাসের কিস্তি বকেয়া পড়েছে। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি কিস্তি দিতে, কিন্তু মা হাসপাতালে ভর্তি থাকায় দিতে পারিনি। তাই তারা আমার ঘরে তালা মেয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আম্বাল ফাউন্ডেশন, শ্রীপুর শাখার মাঠকর্মী কবির হোসেন বলেন, আমাদের লোনটা নিতে গেলে ১ লাখ টাকায় ১০ হাজার সঞ্চয় লাগে, ১ হাজার টাকা বীমা, আনুষাঙ্গিক ২৬৫ টাকা খরচ আছে। আর জোর করে সেলাই মেশিন দেওয়ার বিষয়টি হলো, যেদিন আমি ঋণের প্রস্তাব করি উনিই (শামীমা) আমাকে বলেছিলেন এক লাখ টাকা লোন দিলে একটি সেলাই মেশিন নেবেন। পরদিন যখন স্যারেরা ভিজিট করে লোনটি বাদ দেন তিনিই আমাকে বলেছেন মেশিনটা তাকে নগদ টাকা দিয়ে দিতে। সেই শর্তে মেশিনটা দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া ঘরে তালা লাগানোর বিষয়ে তিনি বলেন, যখন একটি ঋণের সদস্য বাসায় থাকেন না তখন জামিনদারকে ধরবেন এটাই স্বাভাবিক। আমি সবসময়ই তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। কোনো কল তারা ধরছিল না। আমরা বুধবার গিয়েও তাকে বাসায় পাইনি। যাওয়ার সময় ঘরে জামিনদারের উপস্থিতিতে তালা লাগিয়েছি।

কিস্তি না পেয়ে ঘরে তালা লাগানোর বিষয়ে আম্বালা ফাউন্ডেশনের শ্রীপুর শাখার ব্যবস্থাপক আশিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই একটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে কি একটা বিরক্তিকর পরিস্থিতির মধ্যে আছিরে ভাই, বলার মতো না। শামীমা আক্তারকে দেওয়া লোনের কিস্তি সঠিক সময়ে আসছিল না। প্রতি মাসেই মূল কিস্তি থেকে ৫শ টাকা ১ হাজার টাকা কম দিতো। গত বুধবার সন্ধ্যার কিছু সময় আগে আমার মাঠকর্মী কিস্তির টাকা জন্য তার বাসায় যায়। কিন্তু তাদের ঘরের দরজা খোলা থাকলেও তারা বাসায় ছিল না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে তারা না আসায় আমরা তাদের আসার অপেক্ষা করছিলাম। সবশেষ রাতে আসার সময় ঋণের জামিনদারকে ডেকে এনে তার সামনেই ঘরে তালা লাগিয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে আম্বালা ফাউন্ডেশনের এরিয়া ম্যানেজার টিটু চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কিস্তি দেওয়ার কথা বলে কর্মকর্তাদের বসিয়ে রেখে বাড়ি থেকে চলে গিয়েছে। আমাদের প্রতিষ্ঠানিক নিয়মে ঋণ খেলাপিদের বাড়িতে তালা লাগানোর নিয়ম নেই। এটা পরিস্থিতির শিকার।

এ বিষয়ে শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ্ জামান বলেন, এ বিষয়ে কেউ থানায় জানায়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।