কালজয়ী বইয়ের মোড়কে সাজানো দৃষ্টিনন্দন বই-দেওয়াল
মাদক, মোবাইল গেমস, ফেসবুক এবং ইউটিউবে ডুবে থাকা বর্তমান প্রজন্মকে বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতে কালজয়ী ৩৩টি বইয়ের মোড়কে বাড়ির দেওয়াল সাজিয়েছেন রাকিব হাসান নামের কিশোরগঞ্জের এক বইপ্রেমী। এর মাধমে তরুণ প্রজন্ম জানতে পারছে কালজয়ী বই ও লেখকের নাম। প্রতিদিন বইয়ের দেওয়াল দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। ভাষার মাসে ভিড় আরও বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার সরারচর ইউনিয়নের কালেরখাঁ ভাণ্ডা গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শামছুল হক ভূঁইয়া ও তার স্ত্রী ছিলেন বইপ্রেমী। বাবা-মায়ের মতো বই পড়ার অভ্যাস তাদের ছেলে রাকিব হাসানেরও। তাই তিনি নিজে বই পড়ার পাশাপাশি অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে বাড়ির দেওয়াল সাজিয়েছেন কালজয়ী বইয়ের নামে।
ব্যতিক্রমী এ দেওয়াল তৈরিতে ব্যবহার করা হয়েছে স্টিলের পাত। এটি তৈরি করতে ঢাকা থেকে আনা হয়েছে কারিগর। সময় লেগেছে দুই বছর।
কাজী নজরুল ইসলামের ‘অগ্নিবীণা’, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’, বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, জসীম উদ্দীনের ‘নকশী কাঁথার মাঠ’, আনিসুল হকের ‘মা’, হিসাম আল আওয়াদির ‘বি স্মার্ট ইউথ মুহাম্মদ’, স্যার সৈয়দ আমীর আলীর ‘দ্য স্পিরিট অব ইসলাম’, ‘ইসলামী ফাউন্ডেশনের ‘সীরাতে ইবনে হিসাম’, সমরেশ মজুমদারের ‘গর্ভধারিণী’, সুকুমার রায়ের ‘আবোল তাবোল’, ‘হুমায়ূন আহমেদের ‘জোছনা ও জননীর গল্প’, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু’, আরিফ আজাদের ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’, খালেদ হোসেইনির ‘দ্য কাইট রানার’, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পথের পাঁচালী’, জীবনানন্দ দাসের ‘বনলতা সেন’, মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম’ ও ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, আলেক্সান্দর বেলায়েভের ‘উভচর মানুষ’, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’, জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’, হারুকি মুরাকামির ‘নরওয়েজিয়ান উড’, শহীদুল্লাহ কায়সারের ‘সংশপ্তক’, রশীদ হায়দারের ‘১৯৭১: ভয়াবহ অভিজ্ঞতা’, মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’, আবু ইসহাকের ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’, আল্লামা ইবনে কাসিরের (রহ:) ‘তাফসিরে ইবনে কাসির’, জহির রায়হানের ‘বরফগলা নদী’, আইজাক আসিমভের ‘ফাউন্ডেশন’, হুমায়ূন আহমেদের ‘তোমাদের জন্য রূপকথা’ ও হেলাল হাফিজের ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ ইত্যাদি বই স্থান পেয়েছে রাকিব হাসানের বইয়ের দেওয়ালে।
স্কুলশিক্ষার্থী শাহিনা আক্তার বলে, ‘প্রতিদিনই স্কুলে যাওয়ার সময়ই এই বাড়ির দেওয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। দেওয়ালটি দেখতে দেখতে বিভিন্ন বই ও লেখকের নাম মুখস্থ হয়ে গেছে। বইগুলো দেখে বই পড়ার আগ্রহ তৈরি হয়েছে।’
স্থানীয় আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘বই-দেওয়াল’ বাড়িটি আমাদের এলাকার সম্মান বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে এখানে একটি উন্মুক্ত গ্রন্থাগার থাকলে সবাই এসব বই পড়ার সুযোগ পাবেন।
বই-দেওয়াল বাড়ির নির্মাতা ঢাকার একটি বেসরকারি সংস্থার উপমহাব্যবস্থাপক মো. রাকিব হাসান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, মাদক, মোবাইল গেম ও সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদির কারণে বর্তমান প্রজন্মের কাছে একধরনের বই বিমুখতা দেখা দিয়েছে। তাদের ভাবনাতেই যেন নেই মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলনের পটভূমি এবং বাঙালি জীবন ও সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে কালজয়ী সব বইয়ের নাম। অথচ একজন মানুষের প্রকৃত বন্ধু হচ্ছে বই।
তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে এসব বই পড়ার এবং বাঙালির জীবন ও সংগ্রামের ইতিহাস জানার প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তুলতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমার বাড়ি পরিদর্শন করে বই পড়ার চেতনা ফিরে এলে আমার এ চেষ্টা সার্থক ও সফল হবে।
এসআর/জেআইএম